Image description

বাংলাদেশ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের সহায়তায় এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ঢাকা চীনের কাছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে। চীনও এ প্রকল্পে তীব্র আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এই প্রকল্প ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সোমবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে আলোচনা করেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা প্রকল্পে চীনের ঋণের বিষয়ে বেইজিং ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশও এ প্রকল্পে চীনের সংশ্লিষ্টতাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।

বৈঠকে আরও আলোচনা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরের পর সেই বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি নিয়ে। এ ছাড়া চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্পের বিষয়ও উঠে এসেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগে (জিজিআই) বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণের বিষয়টিও বৈঠকে বিস্তারিত আলোচিত হয়। রাষ্ট্রদূত জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৮০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, যা সর্বোচ্চ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, তিস্তা প্রকল্পে চীন বেশ আগ্রহী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এ বিষয়ে চীনের সঙ্গে কাজ করছে। চলতি বছরের শেষে প্রকল্পটি যাচাইয়ের জন্য চীন থেকে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে আসবে।

গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর তিস্তা প্রকল্প এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় মে মাসে পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দিয়ে চীনের ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি জানায়। জুলাইয়ে ইআরডি চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়ে ‘কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন অব তিস্তা রিভার প্রজেক্ট’-এর জন্য ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চায়। ঢাকা এ বছরের মধ্যে এ প্রকল্পের আর্থিক চুক্তি সই করতে চায়।

তিস্তা মহাপরিকল্পনায় অতীতে চীন ও ভারত উভয়ই আগ্রহ দেখিয়েছিল। ২০২৪ সালের মে মাসে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়েত্রা বাংলাদেশ সফরে এসে এ প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারও ভারতের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পক্ষে ছিল। ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “চীন তো রেডি; কিন্তু আমি চাচ্ছি যে এটা ভারত করে দিক, এই প্রকল্পটি করলে এই প্রকল্পের জন্য যা দরকার, ইন্ডিয়া দিতেই থাকবে।”

প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ডলার, যার মধ্যে চীনের কাছে ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছে। বাকি অংশ সরকারি অর্থায়নে পূরণ করা হবে। ২০২৬ সালে কাজ শুরু করে ২০২৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এর আগে জানিয়েছিলেন, তিস্তা প্রকল্পে বেইজিংয়ের আগ্রহ রয়েছে। তবে প্রকল্পটি কার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে, সে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের। চীন বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে সম্মান করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, তিস্তা নিয়ে ঢাকা কৌশলগতভাবে এগোচ্ছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি নদীর উৎপত্তিস্থল চীনে। চীন সেখানে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করছে। তাই তিস্তার মতো কৌশলগত প্রকল্পে চীনের সম্পৃক্ততা থাকলে নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।