Image description

অবশেষে ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে জাকসু জিএস, এজিএসসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে বিশাল জয় পেয়েছে শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশীদ জিতু ভিপি (সহ সভাপতি) পদে বিজয়ী হয়ে চমক দেখিয়েছেন। ভিপি পদে ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়েছেন আব্দুর রশীদ জিতু ও জিএস পদে ৩ হাজার ৯২০ ভোট পেয়েছেন মাজহারুল ইসলাম।

আজ শনিবার বিকেল ৫টার দিকে নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সদস্যসচিব সিনেট কক্ষে প্রবেশ করেন। ফলাফল ঘোষণার শুরুতে জাকসু নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও প্রীতিলতা হলের রিটানিং কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে ফলাফল ঘোষণা শুরু করে নির্বাচন কমিশন। ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনিরুজ্জামান, সদস্য সচিব এ কে এম রাশিদুল আলম, সদস্য লুৎফুল এলাহীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। 

গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শেষে হল কেন্দ্রগুলো থেকে ব্যালট বাক্স সিনেট ভবনে আনা হয় এবং ওইদিন রাত ১০টার কিছু পর থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করলো নির্বাচন কমিশন।

চূড়ান্ত ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশীদ জিতু ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ইংরেজি বিভাগের (৪৮তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের (৪৯ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ফেরদৌস আল হাসান, এবং এজিএস (ছাত্রী) পদে দর্শন বিভাগের (৪৮ ব্যাচ) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা,  শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে ফার্মেসি বিভাগের আবু উবায়দা উসামা, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক পদে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত মীর, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি জয়ী হয়েছেন। এরা সকলেই শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত প্রার্থী।

এছাড়া সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে শেখ জিসান আহমেদ (স্বতন্ত্র), সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রায়হান উদ্দিন (শিবির), নাট্য সম্পাদক হিসেবে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের রুহুল ইসলাম (শিবির),  ক্রীড়া সম্পাদক পদে বাংলা বিভাগের ৪৮ ব্যাচের মাহমুদুল হাসান কিরণ (স্বতন্ত্র), সহ-ক্রীড়া (ছাত্র) সম্পাদক পদে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মাহাদী হাসান (শিবির), সহ-ক্রীড়া (ছাত্রী) সম্পাদক পদে গণিত বিভাগের ফারহানা লুবনা (শিবির),  আইটি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে ফার্মেসি বিভাগের ৪৮ ব্যাচের রাশেদুল ইমন লিখন (শিবির), সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন সম্পাদক পদে ৪৯ ব্যাচের আহসান লাবিব (বাগছাস), সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন সম্পাদক পদে মাইক্রোবায়োলজি (ছাত্র) তৌহিদ ইসলাম (শিবির), সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন সম্পাদক (ছাত্রী) পদে ফার্মেসি বিভাগের নিগার সুলতানা (শিবির), স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের হুসনী মোবারক (শিবির), পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের তানভীর রহমান (শিবির) জয়ী হয়েছে।

জাকসুর কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফাবলিহা জাহান, নাবিলা বিনতে হারুন, নুসরাত জাহান ইমা, হাফেজ তরিকুল ইসলাম, আবু তালহা। কার্যকরী সদস্যদের প্রথম ৫ জনই শিবির সমর্থিত প্রার্থী ও মোহাম্মদ আলী চিশতী (বাগছাস) প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। 

জাকসুর ২৫টি পদের বিপরীতে এবার ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের মধ্যে সহ সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মোট ২৫ পদের মধ্যে ২০টিতে ছাত্র শিবির সমর্থিত, ২ টি পদে বাগছাস এবং ৩ টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।

নির্বাচনে মোট ৮টি প্যানেল অংশ নেয়। এর মধ্যে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, বামপন্থি সংগঠন ও স্বতন্ত্রদের সমর্থিত প্যানেল ছিল। ছাত্রদের ১১টি ও ছাত্রীদের ১০টি হলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সব মিলিয়ে ২১টি ভোট কেন্দ্র এবং ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছিল।

এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ৫ হাজার ৭২৮ জন, ছাত্র ভোটার ৬ হাজার ১৫ জন। ভোট পড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।