গণ-অভ্যুত্থানের পর শ্রীলঙ্কার ক্ষমতায় যাওয়া রনিলের পতন; নতুন সমীকরণে দক্ষিণ এশিয়া

শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের রাজনৈতিক যাত্রা শেষ হয়েছে এক নাটকীয় গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে। গত শুক্রবার রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপব্যবহারের অভিযোগে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনা শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে নতুন মোড় এনেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় জনক্ষোভের মুখে ক্ষমতা দখলকারী নেতাদের জবাবদিহির এক নতুন বার্তা দিয়েছে।
২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকটে শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতির কারণে গণ-অভ্যুত্থান হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছেড়ে পালানোর পর রনিল বিক্রমাসিংহে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আসেন এবং পরে সংসদীয় ভোটে নির্বাচিত হন। তবে তাঁর আইএমএফ-সমর্থিত কঠোর সংস্কার, বেসরকারিকরণ নীতি এবং বিক্ষোভকারীদের দমন জনমনে অসন্তোষ বাড়ায়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে তিনি মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে মার্কসবাদী জাতীয় জনশক্তি (এনপিপি) নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েকের কাছে পরাজিত হন।
গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালের লন্ডন সফর নিয়ে। অভিযোগ, হাভানার জি-৭৭ সম্মেলনের পর লন্ডনে স্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রনিল সরকারি তহবিল ব্যবহার করেছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, স্ত্রীর ভ্রমণ খরচ তিনি নিজেই বহন করেছেন, সিআইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করে। কলম্বোর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন খারিজ হওয়ায় তাঁকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত রিমান্ডে পাঠানো হয়। এতে রনিল শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথম গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।
‘দ্য ফক্স’ নামে খ্যাত ৭৬ বছর বয়সী রনিল কলম্বোর এক প্রভাবশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পড়ে ১৯৭৭ সালে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) সংসদ সদস্য হন। ছয়বার প্রধানমন্ত্রী হলেও কোনো মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শান্তি চুক্তি থেকে জোট গঠন—অনেক টানাপোড়েনে ভরা।
শ্রীলঙ্কার এই গণ-অভ্যুত্থান এশিয়ায় একটি বিরল ঘটনা, যা বাংলাদেশে ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার সরকার পতনের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এশিয়ার রাজনীতিতে সতর্কবার্তা—জনসমর্থন ছাড়া ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। রনিলের পতন শ্রীলঙ্কায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জবাবদিহির নতুন যুগের সূচনা করেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে।
Comments