
চীন ও ভারতസহ দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ নিরসন ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের বৈঠকে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা ও বাণিজ্য পুনরায় শুরুর বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।
সীমান্ত বিরোধ নিরসনে ঐকমত্য
মঙ্গলবার দিল্লিতে বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের ২৪তম বৈঠকে চীনের পক্ষে ওয়াং ই এবং ভারতের পক্ষে অজিত দোভাল নেতৃত্ব দেন। সীমান্ত বিরোধ সমাধানে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনার আওতায় একটি বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী ও একটি কার্যকরী গোষ্ঠী গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উভয় দেশ সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে। অজিত দোভাল জানান, গত ৯ মাস ধরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করেছে।
মোদির চীন সফরের ঘোষণা
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, তিনি আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) বৈঠকে যোগ দিতে যাবেন। সাত বছরের মধ্যে এটি হবে তার প্রথম চীন সফর।
তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের প্রত্যাশা করছেন, যা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার করবে। মোদি তার এক্স হ্যান্ডেলে বলেন, “পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সংবেদনশীলতা ও স্বার্থের ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে যাচ্ছে।”
বাণিজ্য পুনরায় শুরুর উদ্যোগ
দুই দেশ সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় শুরুর বিষয়ে আলোচনা করেছে, যা ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষ ও কোভিড মহামারীর কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ পাস, হিমাচল প্রদেশের শিপকি লা পাস এবং সিকিমের নাথু লা পাস দিয়ে বাণিজ্য পুনরায় চালুর সম্ভাবনা নিয়ে কাজ চলছে।
এছাড়া, চীন ভারতে সার, রেয়ার আর্থ খনিজ ও টানেল বোরিং মেশিনের উপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, যা অর্থনৈতিক সহযোগিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আশার নতুন দিগন্ত
ওয়াং ই বৈঠকে বলেন, “সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। দীর্ঘমেয়াদী সুসম্পর্ক দুই দেশের স্বার্থেই উপকারী।” জয়শঙ্কর জোর দেন, মতপার্থক্য যেন বিরোধে রূপ না নেয়। ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্কে যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল, তা কাটিয়ে উভয় দেশ এখন শান্তি ও সহযোগিতার পথে এগোচ্ছে।
Comments