Image description

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান তীর্থভূমি চন্দ্রনাথ ধামে মসজিদ নির্মাণের গুজবে দুই দিন ধরে তোলপাড় চলছিল। শনিবার এ নিয়ে একটি পোষ্ট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সনাতনী ধর্মপ্রান মানুষসহ সীতাকুন্ডের অসংখ্য সচেতন মুসলিম মানুষ এরকম প্রচারণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। এত জায়গা থাকতে চন্দ্রনাথ ধামেই কেন মসজিদ নির্মাণের কথা বলতে হবে এমন প্রশ্ন তোলেন তারা। 

এরকম অবস্থায় রবিবার বিকালে সাড়ে তিন কি.মি. উঁচু পাহাড় চূড়ায় চন্দ্রনাথ ধামে ছুটে যান সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এডিশনাল এসপি ও ওসিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা সেখানে কোনরুপ মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে না বলে সকল সনাতনীদের উদ্দেশ্যে বিবৃতি প্রদান করলে সাধারণ মানুষ আশ্ব- হন। 

এ নিয়ে সমালোচনা শুরুর পর সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকালে সীতাকু- থানা-পুলিশ জানিয়েছে, মন্দির এলাকার পুলিশ ফাঁড়িতে সদস্য বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ নজরদারিও চালানো হচ্ছে।

জানা গেছে, গত শনিবার এম.এম সাইফুল ইসলাম নামক এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিয়ে লেখেন ‌‌‌‌; সীতাকুন্ড পর্বতের চূড়ায় মসজিদ ৯০% কনফার্ম। আলহামদুলিল্লাহ। ভেতরে বিস্তারিত বর্ণনায় তিনি লেখেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় ২টি মন্দির থাকতে পারে আর আমরা মসজিদ করা দূরে থাক নামাজের অনুমতি পাই না। এছাড়া টাকার ব্যবস্থা পোষ্টদাতা সাইফুল ইসলাম করবেন বলে উল্লেখ করেন। এই পোষ্টটি অল্প সময়ে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রতিক্রিয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সামাজিক মাধ্যমে লেখেন সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ ধাম কলিযুগের একটি মহাতীর্থ। এখানে কেউ এসে মসজিদ নির্মাণের কথা বলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করছেন। যা কাম্য না। প্রায় একই রকম বিবৃতি দেন সীতাকুন্ডের অসংখ্য সচেতন মুসলমানও।

চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে এসে রবিবার সন্ধ্যায় সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার এক বিবৃতি প্রদান করেন। নির্বাহী অফিসারের ফেসবুক পেজে বিবৃতিতে তিনি সীতাকুন্ড উপজেলা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে চন্দ্রনাথ মন্দিরের পাশে মসজিদ নির্মাণ সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোষ্ট আমাদের নজরে এসেছে। উপজেলা প্রশাসন এ ধরণের অনুমতি কাউকে দেয়নি বা যোগাযোগ করেনি। স্যোসাল মিডিয়ায় এ ধরণের প্রোপাগান্ডা বা অপপ্রচার ছড়িয়ে যারা সীতাকুন্ডের সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায় তাদের আইন অনুযায়ী কঠোরভাবে দমন করা হবে। তিনি সবার প্রতি শান্তি ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজিয়ে রাখার জন্য অনুরোধ জানান।

মঙ্গলবার সীতাকুন্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবুর রহমান বলেন, যারা এমন পোস্ট দিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। ফেসবুকে দেওয়া পোস্টটিও সরিয়ে ফেলেছে। ফেসবুক পোস্টদাতা যার সঙ্গে কথা হয়েছে তার নাম উল্লেখ করতে চাননি ওসি মুজিবুর রহমান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলাম মঙ্গলবার রাত আটটায় বলেন, মন্দির এলাকায় কোনো সমস্য নেই। আগেও ছিল না। পর্যটকের ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হয়েছে। মন্দির এলাকায় কোনো মসজিদ করার অনুমতি নেই। তারা না বুঝে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে।