Image description

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে গত অর্ধ শতাব্দী ধরে অব্যাহত ভাঙন শত শত পরিবারকে নিঃস্ব করেছে। বসতবাড়ি, ফসলের জমি, গাছপালা, পানের বরজসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন রোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় নদীপারের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রামের বাসিন্দা মাকসুদা বেগম (৭০) বলেন, “আমার স্বামীর বাড়ি নদীতে চলে গেছে। পরে ছেলেরা আরেকটি বাড়ি করেছিল, সেটিও ভেঙে গেছে। এমনকি আমার স্বামীর কবরও নদী গ্রাস করেছে। এখন আমরা অন্যের জমিতে কোনোরকমে ঘর তুলে বসবাস করছি। কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। আমরা একেবারে অসহায়।”

একই গ্রামের রশিদ মোল্লা (৫০) জানান, “প্রায় ৫০ বছর ধরে নদী ভাঙন চলছে, কিন্তু এখনো কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শতাধিক পরিবার তাদের ভিটেমাটি, গাছপালা ও সম্পত্তি হারিয়েছে।”

সুগন্ধা নদীর ভাঙনে নলছিটি উপজেলার তিমিরকাঠি, দরিরচর, খোজাখালী, মল্লিকপুর, সিকদারপাড়া, বহরমপুর, ষাটপাকিয়া, কাঠিপাড়া, অনুরাগসহ ১০টিরও বেশি গ্রামের বড় অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। এর মধ্যে খোজাখালী, দরিরচর, তিমিরকাঠি ও সিকদারপাড়া গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বর্ষা মৌসুমে নদীপারের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ে, কারণ বাড়িঘর রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

মগড় ইউনিয়নের কাঠিপাড়া গ্রামের ইউসুফ হাওলাদার (৭০) বলেন, “একসময় এখানে ২০-৩০টি বসতবাড়ি ছিল। এখন মাত্র ২-৩টি পরিবার আছে, তাও নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। আমরা শুধু ভাঙন রোধের ব্যবস্থা চাই।”

সরই গ্রামের জামাল ফকির বলেন, “আমার বাপ-দাদার বাড়ি নদীর মাঝখানে। নতুন করে বাড়ি করেছি, কিন্তু ভাঙন রোধে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।” অবসরপ্রাপ্ত তহসিলদার হাজী আব্দুল হক তালুকদার বলেন, “যেখানে অনেক বাড়িঘর ছিল, সেখানে এখন লঞ্চ চলাচল করে। নদী আমার বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। হয়তো ভবিষ্যতে নিজ ভিটায় থাকতে পারব না।”

সরই গ্রামের ইউপি সদস্য বেল্লাল হোসেন মোল্লা জানান, “অনেক স্বজন তাদের বাপ-দাদার বাড়ির চিহ্নও রাখতে পারেনি। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো সমাধান হয়নি।”

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, “ঝালকাঠি ও নলছিটির ভাঙন এলাকায় একটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। অন্যান্য ভাঙন স্থানে প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদিত হলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।”