
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার গ্রামীন জনপদে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে অভূতপূর্ব উন্নয়নের ঢেউ এসে পৌঁছেছে, যা পাল্টে দিয়েছে এলাকার জীবনযাত্রার চিত্র। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথির তত্ত্বাবধানে চরফ্যাশনের ২১টি ইউনিয়নে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫৯টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, যার মাধ্যমে কাঁচা সড়ক নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ ভরাট ও সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এসব কাজের ফলে গ্রামীণ জনপদে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, এবং সাধারণ মানুষ এখন এর সুফল ভোগ করছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে চরফ্যাশন উপজেলার গ্রামীন উন্নয়নের জন্য মোট ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে টিআর প্রকল্পে ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, কাবিখা প্রকল্পে ২৫৫ মেট্রিক টন গম এবং কাবিটা প্রকল্পে ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। মার্চ মাস থেকে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও বৈরী আবহাওয়া ও অতিবৃষ্টির কারণে কিছু প্রকল্পের কাজ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। তবে বর্তমানে অসম্পন্ন কাজগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নিবিড় তদারকির ফলে এসব কাজে গুণগত মান বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম জানান, তাদের এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁচা সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে দুই গ্রামের মানুষের জন্য দুর্ভোগের কারণ ছিল। বর্ষাকালে হাঁটু পানিতে স্কুলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল কষ্টকর। কিন্তু এবার সরকারি বরাদ্দে সড়কটি নির্মাণের ফলে প্রায় ৪ হাজার মানুষের যাতায়াত সহজ হয়েছে।
রসুলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মালেক ডুবাই বলেন, তাদের এলাকার মসজিদ ও মাদ্রাসার একমাত্র সড়কটি ৪০ বছর ধরে অবহেলিত ছিল। এবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদনের পর সড়কটি নির্মাণ করা হয়, যা দুই গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করেছে।
এওয়াজপুর ইউনিয়নের শিক্ষার্থী তানহা জানান, বর্ষাকালে সড়কে হাঁটু পানির কারণে স্কুলে যাওয়া কঠিন ছিল, বই-খাতা ভিজে যেত। কিন্তু নতুন সড়ক নির্মাণের ফলে তিনি এখন নিয়মিত ও স্বাচ্ছন্দ্যে স্কুলে যেতে পারছেন।
রসুলপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ঢালচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাসেম জানান, তাদের বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতো। এবার সরকারি বরাদ্দে মাঠ ভরাট ও ঘর সংস্কারের ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দুর্ভোগ কমেছে।
জিন্নাগড় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, তিনটি প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা তিনি নিশ্চিত করেছেন যে কাজগুলো গুণগত মান বজায় রেখে সম্পন্ন হয়েছে। এতে গ্রামের মানুষের চলাচলের সুবিধা বেড়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জি এম ওয়ালিউল ইসলাম বলেন, “টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিদিন তদারকি করছি। বর্ষার কারণে কিছু কাজ আংশিক বন্ধ থাকলেও সেগুলো এখন চলমান। কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানান, “প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। আমি নিজে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রকল্প পরিদর্শন করেছি, এবং বেশিরভাগ কাজই মানসম্মত হয়েছে। বাকি কাজগুলোও শিগগিরই সম্পন্ন হবে।”
তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, “আমি সবাইকে সরেজমিনে কাজ দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। জনগণের স্বার্থে প্রতিটি টাকা সঠিকভাবে ব্যয় করা হচ্ছে।” এই উন্নয়ন কার্যক্রম চরফ্যাশনের গ্রামীণ জনপদকে একটি নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
Comments