
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অবিরাম হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে আরও ৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু রয়েছে। বার্তাসংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। একই সময়ে আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র ও চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হলেও, ইসরায়েল গাজায় তার আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
রোববার সারাদিন ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু এবং একাধিক পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন।
ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজার শেখ রাদওয়ান ও আল-নাসর এলাকার দুটি বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করে। এই বাড়িগুলোতে বাস্তুচ্যুত বহু পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। এই হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অধিকাংশ মানুষ তখন ঘুমাচ্ছিলেন এবং নিহতদের মধ্যে অনেকেই শিশু ও নারী। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ওয়াদি গাজার দক্ষিণে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গোলাবর্ষণে ৪ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন। গাজা শহর ও মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলায় ৬ জন নিহত হন। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য ও পানি সংকটে থাকা মানুষজন যখন ত্রাণের আশায় লাইন দিচ্ছিলেন, তখনই এই হামলাগুলো চালানো হয়েছে।
উত্তর গাজার আল-সাফতাওয়ি এলাকায় একটি বেসামরিক গাড়িতে ড্রোন হামলায় তিন ভাই মারা যান। শেখ রাদওয়ানে একটি আশ্রয়কেন্দ্রের তাঁবুতে ড্রোন হামলায় আরও ৩ জন নিহত হয়েছেন। গাজার পশ্চিমের শাতি শরণার্থী শিবিরে একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ওপর বিমান হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
আল-শিফা হাসপাতাল জানিয়েছে, নিহতদের মরদেহ খণ্ডবিখণ্ড অবস্থায় এসেছে এবং আহতদের সংখ্যা অনেক। খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় দুটি অস্থায়ী ত্রাণশিবিরে বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু ও এক গর্ভবতী নারী রয়েছেন।
আল আলবানী মসজিদের কাছে অপর এক ড্রোন হামলায় ৪টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজনই শিশু। গাজার আল-তুফাহ ও আল-দারাজ এলাকায় আবাসিক ভবনে বোমা হামলায় একাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে এক পরিবারের ৮ সদস্য ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন এবং অন্য একটি হামলায় আরও ৩ জনের প্রাণ গেছে।
এদিকে, মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কাতারে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছেন। তবে আলোচনা চললেও গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এমন অবস্থায় গত নভেম্বরেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও চলছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে।
Comments