বরিশালে ডেঙ্গুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জলাতঙ্ক, ৬ মাসে আক্রান্ত ১০ হাজার

দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির মধ্যে এবার জলাতঙ্ক রোগের প্রকোপও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান পদক্ষেপের অভাব এবং ভ্যাকসিন সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গত ৬ মাসে বরিশালে ১০ হাজার ৪৬৬ জন জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ৬ মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫৮ জন জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর আগে ২০২৪ সালে প্রতিদিন গড়ে ৫৯ জন এই রোগের ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন, যা থেকে বোঝা যায় আক্রান্তের হার প্রায় একইরকম রয়েছে, তবে চলতি বছর ৬ মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, ছুঁচো, বাদুড়, শিয়াল ইত্যাদি প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের শিকার। চিকিৎসকরা বলছেন, অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে বিড়ালের কামড় কিংবা আঁচড়ে আহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ২০৯২ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৭৬৩ জন, মার্চ মাসে ১৪৭৮ জন, এপ্রিল মাসে ১৫৬৪ জন, মে মাসে ১৯০৯ জন এবং জুন মাসে ১৬৬০ জন জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালে প্রায়ই সরকারি জলাতঙ্ক ভ্যাকসিনের সংকট দেখা যাচ্ছে। এর ফলে রোগীদের বাধ্য হয়ে চড়া দামে বেসরকারি উৎস থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় আর্থিক বোঝা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কুকুর ও বিড়াল পোষা প্রাণী হওয়ায় ভ্যাকসিন নিতে আসা রোগীদের অধিকাংশই এই দুই প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের শিকার। পাশাপাশি, জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়ায় সামান্য আঁচড়েও তারা ভ্যাকসিন নিতে আসছেন। তবে, চিকিৎসকরা আরও জানান, বাংলাদেশে জলাতঙ্ক নির্ণয়ের কোনো সঠিক পদ্ধতি নেই এবং রোগের লক্ষণ ও নমুনা দেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যান আরও বলছে, তিন ডোজ ভ্যাকসিনের মধ্যে প্রথম ডোজ সবাই নিলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ নেওয়ার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। যেমন, গত জানুয়ারিতে মোট ২০৯২ জন রোগী প্রথম ডোজ নিলেও, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৯৪৯ জন এবং তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ১৮৩৫ জন। এভাবে প্রতি মাসে মোট আক্রান্ত রোগীর একটি বড় অংশ দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ টিকা নিচ্ছেন না।
বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডাক্তার মলয় কৃষ্ণ বড়াল মানবকণ্ঠকে বলেন, "দিন দিন মানুষ সচেতন হচ্ছে। তাই পোষা প্রাণীর সামান্য আঁচড়েও তারা জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিচ্ছে। রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ভ্যাকসিন সংকট সব সময় থাকে না। তাছাড়া আমাদের ভ্যাকসিন সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় সরবরাহ ও বিতরণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।"
Comments