মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর, আইনগত সহায়তা নিতে শঙ্কায় পরিবার

মানিকগঞ্জে আবু হুরাইরা (রা:) পুরুষ মাদ্রাসার হেফজ শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আহত শিক্ষার্থী মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের ভীতিতে আইনগত সহায়তা নিতে শঙ্কায় আছে পরিবারটি।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের আবু হুরাইরা (রা:) পুরুষ মাদ্রাসায় গতকাল সোমবার (৩০ জুন) সকালে এই ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থী মো. সাকিবুল হাসান (১৪) ওই মাদ্রাসার হেফজ শিক্ষার্থী। এবং সে বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের মৃত আব্দুল আলিমের ছেলে। অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুস রেজা (২৫) দুই মাস ধরে মাদ্রাসায় হেফজ শাখার সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম।
জানা গেছে, শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান তিন মাস ধরে মাদ্রাসা হেফজ শাখায় ভর্তি হয়েছেন। এর আগে একই মাদ্রাসায় সে চার বছর মেয়াদী নাজেরা (দেখে-দেখে কোরআন তেলাওয়াত করা) পড়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, গতকাল (৩০ জুন) মুখস্ত পড়ায় ভুল করায় আমাকে বেদ দিয়ে বেধরক মারধর করা হয়েছে। আমি হুজুরের কাছে পা ধরে মাফ চেয়েছি কিন্তু তিনি আমাকে মারতেই থাকেন। আমি অজ্ঞান হয়ে সেখানে পড়েছিলাম। পরে হুজুর চলে যাওয়ার পর আমি কাউকে না বলে মাদ্রাসা থেকে চলে আসি। বিকেলে আমার পরিবার আমাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। আমি আর মাদ্রাসায় পড়তে যাব না।
ভুক্তভোগীর মা মোসাম্মৎ লাইজু বেগম (৪৫) কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা নিতান্তই গরিব মানুষ। বাপ মরা ছেলেকে পড়তে পাঠিয়েছিলাম। আমার ছেলেটারে অমানুষের মত মারধর করেছে। আমার ছেলে ভয়ে আর মাদ্রাসায় পড়তে যেতে চাচ্ছে না। সবাই তো পড়াশোনায় ভালো হয় না তাই বলে অমানুষিক মারধর করা তো ঠিক না। এর আগেও আমার ছেলেকে একাধিকবার মেরেছে। সেই মারের ক্ষত এখনো শুকায়নি। আমি এই অমানুষিক নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।
আহতের বোন জামাই রাসেল মিয়া বলেন, মাদ্রাসার পরিচালক এসে বিষয়টা জানাজানি করতে না করেছেন। এজন্য এখনো থানায় অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছি না। তবে এই জঘন্য কাজের যদি প্রতিবাদ না করি দিনের পর দিন শিক্ষার্থীদের সাথে এমন অশালীন আচরণ চলতে থাকবে।
অভিযুক্ত হেবজ খানার সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুস রেজা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সে পড়াশোনায় অমনোযোগী। এর আগেও তাকে সতর্ক করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল পরা দিতে না পারায় তাকে শাসন করেছি। আমরাও হেফজ করেছি আমাদের কেউ এভাবেই শাসন করা হয়েছে। নইলে আমরা এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। আর এখানে ভুল কিছু করা হয়নি। শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আমি শুনেছি। তার চিকিৎসার জন্য যে খরচ প্রয়োজন তা আমি পরিশোধ করব।
আবু হুরাইরা (রা:) পুরুষ মাদ্রাসার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (৫৫) বলেন, ঘটনা শোনার পর আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেছি। চিকিৎসার যাবতীয় খরচ আমরা বহন করব। শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত শাস্তি প্রদান করা শিক্ষকের ঠিক হয়নি। আমরা মিটিং কল করে দ্রুতই এই শিক্ষককে অপসারণ করবো।
Comments