
বাচ্চারা সারাক্ষণ ক্ষুধায় কান্না করে। ওরা রুটি চায়, ভাত চায়, যে কোনো খাবার চায়। ঘরে কিছু আটা ও শুকনো খাবার ছিল। এখন সব শেষ। আমরা এখন ত্রাণ সংস্থার খাবারের ওপর নির্ভরশীল। তারা যে মসুর ডাল দিয়েছিল, তাতে সন্তানদের ক্ষুধা মেটে না।
একনাগাড়ে কথাগুলো বলছিলেন গাজার বাসিন্দা ইউসেফ আল-আজুরি। মিডল ইস্ট মনিটরে সম্প্রতি তাঁর ভাষ্যে উঠে আসে ত্রাণ নিতে যাওয়া গাজার মানুষের করুণ চিত্র। তিনি বর্ণনা করেন, কীভাবে ত্রাণকেন্দ্রে যেতে তাঁকে রাতের আঁধারে হামাগুঁড়ি দিয়ে অন্ধকারে ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। কীভাবে স্নাইপার দিয়ে গুলি চালিয়ে লোকজনকে হত্যা করছে ইসরায়েলের বাহিনী।
বাড়িঘর হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাঁবুতে থাকা ইউসেফের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছোট শিশু সন্তানদের জন্য সামান্য খাবার জোগাড় করা। এ খাবার নিতে গিয়ে প্রতিদিনই হত্যার শিকার হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ইউসেফ বলেন, এ যেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর খেলা। তারা অভুক্ত রেখে, অপমান করে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে।
গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার নতুন এ পদ্ধতি খুব বেশি দিন আগে শুরু করেনি ইসরায়েল। দীর্ঘদিনের অবরোধ তুলে নিয়ে মাস দেড়েক আগে তারা সীমিত সংখ্যক ত্রাণের ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়। এর পরই শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন নামের একটি সশস্ত্র সংগঠন ত্রাণ দেওয়ার নামে এ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল মিলে গড়ে তুলেছে, যাদের অনুমোদন দেয়নি জাতিসংঘ। তারা গাজার ত্রাণ কেন্দ্রগুলোকে কার্যত বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে। প্রতিদিনই ক্ষুধার্ত মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে। সোমবার ত্রাণ আনতে গিয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন।
কথিত হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনে ত্রাণের জন্য অপেক্ষার মানে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। গত ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত এসব ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অন্তত ৫৮৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ১৮৬ জনেরও বেশি। এ সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।
ইসরায়েলের গণমাধ্যম হারেৎজকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইসরায়েলি সেনা বলেন, ত্রাণকেন্দ্রগুলো এখন ‘কিলিং ফিল্ড’ বা বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। আরেক ইসরায়েলি সেনা জানান, তারা এমনটা করছেন সরকারি নির্দেশ পেয়েই।
Comments