
গাজীপুরকে বলা হয় কাঁঠালের রাজধানী। ঘ্রাণ, মান ও সুস্বাদের জন্য এ জেলার কাঁঠাল বিখ্যাত। রাস্তার দুপাশে, বাজারে, বাড়ির আঙিনায় যেদিকে চোখ যায়, শুধুই কাঁঠাল। বিশেষ করে শ্রীপুর, কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ এলাকায় বিপুল পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদন হয়। বিশেষ করে শ্রীপুর যেন এখন কাঁঠালের রাজ্য।
দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল এবার পেয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের মর্যাদা, আর সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুরের বিখ্যাত কাঁঠাল। নানা সময়ে দেশের বিভিন্ন পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও জাতীয় ফলটি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবার। এতে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কাঁঠাল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে কাঁঠালের এ ভরা মৌসুমে তারা কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, গাজীপুরে প্রতি বছর গড়ে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়। খাজা, গালা ও দুরসা নামক তিন ধরনের কাঁঠাল হয়ে থাকে এ অঞ্চলে। প্রতি বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে এসব জাতের কাঁঠাল রপ্তানি করা হয়। শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় বসে কাঁঠালের সবচেয়ে বড় হাট। পাইকারি ক্রেতারা এসব হাটে ছুটে আসেন কম দামে সুস্বাদু কাঁঠাল নিতে। এ ছাড়া কাঁঠালের চাহিদা বেশি হওয়ায় ছোট (মুচি) অবস্থায়ও বাগান মালিকরা পাইকারদের কাছে গাছ বিক্রি করে দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজারে প্রতিদিন বিক্রি হয় হাজার হাজার কাঁঠাল। দিনে-রাত প্রায় সব সময়ই কাঁঠালের বেচাকেনা চলে। জমজমাট থাকে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। জ্যৈষ্ঠের শুরুতে এরকম চিত্র চলে আষাঢ় মাসের শেষ পর্যন্ত। বাগান মালিকরা প্রতিদিন ভোরে বাগান থেকে পাকা কাঁঠাল সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য ভ্যান, ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে আসেন বাজারে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই দেখা যায় মহাসড়কের ওপর ট্রাকের দীর্ঘ লাইন। লাইন ধরে বিভিন্ন আড়তের সামনে থেকে ট্রাকে ওঠে কাঁঠাল। স্বাদ ও সুগন্ধের বিচারে গাজীপুরের কাঁঠাল শুধু দেশেই না, খ্যাতি রয়েছে বিদেশেও। প্রতিবছর রেকর্ড পরিমাণ কাঁঠাল বিক্রি হয় এ জেলায়।
স্থানীয়রা জানান, শুধু দেশে নয়, গাজীপুরের এ কাঁঠাল পাড়ি দিচ্ছে দেশের সীমানা। নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও। উপযুক্ত নীতিমালা, অবকাঠামো উন্নয়ন, হিমাগার স্থাপন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে গাজীপুরের কাঁঠাল হতে পারে জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গাজীপুর জেলায় মোট ৯ হাজার ১০৩ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীপুরে সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৫৫২ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল আবাদ হয়েছে। জেলায় উৎপাদিত কাঁঠালের পরিমাণ ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। উঁচু জমি, বন্যামুক্ত পরিবেশ ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এখানকার কাঁঠাল হয় বড়, মিষ্টি আর ঘ্রাণে ভরপুর।
গাজীপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, গাজীপুরের কাঁঠালের স্বাদ, গন্ধ ও গুণগতমানে রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (ইডিসি) সার্বিক সহযোগিতায় পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে জিআই স্বীকৃতির আবেদন জমা দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের ৬ মার্চ ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন-২০১৩-এর ধারা ১২ অনুসারে, গাজীপুরের কাঁঠালকে জিআই জার্নাল-৪৬-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ৮ মার্চ এটি ডিপিডিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এতে কাঁঠাল বাংলাদেশের ৪৭তম নিবন্ধিত জিআই পণ্যে পরিণত হয়। কাঁঠালের জিআই স্বীকৃতি কাঁঠালের অর্থনীতির সম্ভাবনার নতুন দরজা খুলে দিয়েছে।
Comments