
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) কমপক্ষে আরও ৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীর সংখ্যাই অর্ধশতাধিক। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এর ফলে এই উপত্যকায় নিহতের মোট সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার(২৫ জুন) আল-জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজার অবরুদ্ধ এলাকায় খাদ্য ও সহায়তা সংগ্রহ করতে আসা সাধারণ মানুষদের ওপর আবারও ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলায় মোট ৮৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৬ জনই সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। গাজা উপত্যকার দক্ষিণের শহর রাফাহ-তেই ২৭ জন সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যারা খাদ্যের জন্য সহায়তা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন।
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে মোট প্রাণহানির সংখ্যা ৫৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন। হতাহতের এই সংখ্যা বিশ্বজুড়ে তীব্র উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
আল জাজিরা আরও জানিয়েছে, মঙ্গলবারের এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর তত্ত্বাবধানে স্থাপিত সহায়তা বিতরণ পয়েন্টগুলোর আশপাশে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিইএ-এর প্রধান এসব সহায়তা বিতরণ পয়েন্টকে “মৃত্যু ফাঁদ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের তথ্যমতে, গাজার মধ্যাঞ্চলে সালাহ আল-দীন সড়কে সহায়তা নিতে আসা মানুষের ওপর হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত এবং আরও ১৪০ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৬২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের পাশে আল-আওদা হাসপাতালে মৃতদেহ আনা হয়েছে, যার সত্যতা আল-জাজিরার যাচাইকারী সংস্থা সানাদ নিশ্চিত করেছে। খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে।
অন্যদিকে, গাজা শহরের উত্তরে এবং রাফাহতেও সহায়তা নিতে আসা মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে। গাজা শহর থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানান, "আল-শিফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠেছিল, অনেকেই চিকিৎসার অপেক্ষায় মারা যান।"
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনারা মানুষজনের কাছে সাহায্যের ট্রাক পৌঁছানোর আগেই গুলি চালায়। আহমেদ হালাওয়া নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, "এটা ছিল গণহত্যা। আমরা পালিয়ে যাচ্ছিলাম, এমন সময়েও ট্যাংক ও ড্রোন থেকে গুলি চালানো হচ্ছিল।"
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে এবং দাবি করেছে, সহায়তা কেন্দ্রে “সন্দেহভাজনরা” ঘনিষ্ঠভাবে এগিয়ে এলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, এই গুলিবর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাই কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই ঘটে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেন, "মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে শুধু খাদ্য নেওয়ার চেষ্টা করার জন্য। সহায়তার নামে পরিচালিত এই সামরিকীকৃত বিতরণ ব্যবস্থা মানবিকতার মৌলিক শর্ত পূরণ করে না। এটি একটি ভয়াবহ বাস্তবতা।" তিনি আরও যোগ করেন, "উভয় পক্ষের নেতাদের এখনই রাজনৈতিক সাহস দেখিয়ে এই হত্যাযজ্ঞ থামানো উচিত।"
Comments