
বাহারি রসালো ফলের সমারোহ নিয়ে এলো মধু মাস। হাটে-বাজারে, রাস্তায়-ফুটপাতে, শহরে-গ্রামে এখন শুধু বিভিন্ন রসালো ফলের সমারোহ। দেখলেই যেন জিভে জল এসে যায়। এ মৌসুমে বিশেষ একটি ফল মানুষের কাছে আকর্ষণ করে সেটি হলো তালের শাঁস। গ্রীষ্মে প্রতিটি হাটবাজারে তালের শাঁসের কদর বাড়ছে। ভ্যাপসাই এই গরমে ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের অন্যতম পছন্দ এখন তালের শাঁস।
সরেজমিনে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেরা সদর ও হাটবাজার ঘুরে দেখা দেখা গেছে, রাস্তার পাশে তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে। তালের শাঁস খেতে খুবই মজা। তাই অনেকে রাস্তার পাশে বসে খাচ্ছেন তালের শাঁস। কেউবা আবার পরিবারের জন্য তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা সদর এলাকায় মৌসুমী তালের শাঁস বিক্রেতা ভুবনঘর গ্রামের আনিছুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই সময়টাতে তালের শাঁস বিক্রি করি। অন্য সময় অটোরিকশা চালাই। গরমে বেশি চাহিদা থাকায় ভালোই তালের শাঁস বিক্রি হয়। সকল খরচ বাদে প্রতিদিন ১ হাজার টাকার উপরে লাভ হয়।
বহু বছর ধরে তালের শাঁস বিক্রি করে আসা দড়িকান্দি গ্রামের আমির হোসেন বলেন, প্রতি বছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালাই। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল ক্রয় করে গাছ থেকে পেরে এনে শাঁস বিক্রি করি। জৈষ্ঠ্যে মাস পর্যন্ত চলবে তালের শাঁস বিক্রি। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টি তাল বিক্রি করা যায়। একটি শাঁস (চোখ) আকার ভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে তার ভালই লাভ হয় বলে জানান।
ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, “তালশাঁস আমার অনেক পছন্দের। তাছাড়া বাচ্চারাও পছন্দ করে। মেডিসিন মুক্ত একটি ফল। দাম যা-ই হোক, বছরে এ ফল একবারই পাওয়া যায়। তাই নিতে এসেছি।”
তাল কিনতে আসা ষষ্ঠ শ্রেনির শিক্ষার্থী ওমর ও ফারদিন জানান, গরমে তালের শাঁস খেতে ভালো লাগে। তাই দুই বন্ধু মিলে তালের শাঁস খেতে এসেছে।
সুস্বাদু এই তালের শ্বাসের গুনাগুন সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, তাপমাত্রার কারণে শুষ্ক ত্বক, চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে তালের শাঁস। অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে যে পানি বেরিয়ে যায় তাও পূরণ করতে সাহায্য করে তালের শাঁস।
তিনি বলেন, তালের শাঁসে রয়েছে আয়োডিন, মিনারেলস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক ও ফসফরাস। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরা তালের শাঁস নানা রোগের পথ্য হিসেবেও কাজ করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেন, বাণিজ্যিক ভাবে এই অঞ্চলে তাল গাছের তেমন বাগান নেই। সাধারণত বসত বাড়ী বা রাস্তার পাশে মানুষ তালগাছ রোপন করে থাকে। তালগাছ লম্বা হওয়ার কারণে বজ্রপাত রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতি রোধ করে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। উপজেলা কৃষি অফিস হতে কৃষকদের মাধ্যমে তালের বীজ রোপনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
Comments