Image description

মুসলমানদের ধর্মীয় দ্বিতীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা তথা কোরবানি ঈদের আর মাত্র দুই দিন বাকি। এ ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কামার পল্লীর লোকজন। সারাক্ষণ শোনা যাচ্ছে ‘টুং-টাং’ শব্দ। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লোহা পিটিয়ে টুং টাং শব্দে দেশী প্রযুক্তির দা, বটি, ছুরি, কুড়াল ও চাপাতি তৈরির কাজ করতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কর্মকাররা।

উপজেললার কুসুম্বী, গাড়িদহ, খামারকান্দি, খানপুর, মির্জাপুর, সুঘাট, ভবানীপুর, বিশালপুর, ভবানীপুর ও শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের ক্রেতারাও প্রতিনিয়ত আসছেন যার যার এলাকার কামারপল্লীতে। প্রায় সবকটি বাজারে কামারের দোকানগুলোতে এমনই দৃশ্য দেখা যায়। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য অনেকে আগে থেকেই অর্ডার নিয়ে রাখা দেশীয় ছোট অস্ত্র বানাতে বেশ উৎসব মুখর ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেছন।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দোকানের সামনে সারি সারি ছুরি, চাপাতি, দা ও বঁটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আকার ও ওজন অনুযায়ী প্রতিটির দামও ভিন্ন। চাহিদা বুঝে অনেক কারিগর আবার কাস্টম ডিজাইনেও সরঞ্জাম তৈরি করছেন কারিগররা। পশুর চামড়া ছাড়ানো, গোস্ত কাটা, জবাই করার বিভিন্ন ধরনের ছোট ও বড় ছুরি, চাকু, বঁটি, কাঠের গুঁড়ি বিক্রি করছেন কামাররা। নতুন ছুরির পাশাপাশি তারা পুরাতন চাকু-ছুরিও ধার কাটাচ্ছেন তারা। দেশীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন মানের ছোট ছুরি ২০-৬০ টাকা, একটু বড় ১০০-১৫০, বঁটি বিভিন্ন মানের আকারের ৪০০, চাপাতি সাড়ে ৩’শ-৬শ, বড় ধারালো পশু জবাইয়ের ছুরি ৫’শ থেকে ১ হাজার টাকা। এর সঙ্গে বার্মিজ ও চীনের তৈরি সিলভার রঙের মান অনুযায়ী চকচকে চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকায়। চায়না ছোট ছুরি ১শ, পশু জবাই করার ছুরি ৩শ-৬শ, দা ৩শ থেকে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার খানপুরের কর্মকার মো. হাসান বলেন, “ঈদের এক মাস আগে থেকেই কাজের চাপ বাড়ে। তবে ঈদের ১০-১৫ দিন আগে তো কাজের ভিড়ে দম ফেলারও সময় মেলে না। সকাল থেকে রাত গভীর পর্যন্ত কাজ করেও সব অর্ডার সময়মতো ডেলিভারি দিতে হিমশিম খেতে হয়। সাধারণ সময়ে দিনে ৫-১০টি দা বা ছুরি তৈরি করলেও, ঈদের সময় সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩০-৪০ টিতে। তিনি আরো বলেন “আমাদের পূর্বপুরুষরাও এই পেশায় ছিলেন। আমরাও করছি। কিন্তু এখনকার তরুণরা আগ্রহ হারাচ্ছে। কারণ, কষ্ট অনেক, আয় তুলনামূলক কম। সরকারি সহায়তা পেলে হয়তো এই পেশা আবার মর্যাদা ফিরে পাবে।” 

শেরপুর পৌর শহরের শিশুপার্ক এলাকার কামার বীরেন কর্মকার বলেন, এখন ব্যস্ত সময় পার করছি। এ বছর আশানুরুপ ক্রেতা মিলছে না। শহরের বারদুয়ারী হাটে দা, ছুরি, চাকু ও বঁটির বেচাকেনা চলছে কোনমতে।

দোকানমালিক কালাচাঁদ মহন্ত ও রতন কর্মকার বলেন, এক কেজি ওজনের লোহার তৈরি একটি দা তাঁরা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, ১২ ইঞ্চি লম্বা চাকু ১৩০ টাকায়, ১০ লম্বা ৫০ টাকায় ও ১ কেজি ওজনের বঁটি তাঁরা ২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।

তবে ব্যয়ের দিক দিয়ে চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। কারিগররা জানান, লোহার পাত, কাঠের হাতল, কয়লা ও অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ। এতে লাভ কমে গেছে বলে জানান অনেকেই।

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিছুর রহমান জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে জেলার ১২টি উপজেলার ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪২ টি বিভিন্ন ধরনের পশু প্রস্তুত কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন খামারিরা। তবে চাহিদার চেয়ে ৩৮ হাজার ৪৩২ টি কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। মজুত পশুর মধ্যে ষাঁড় এক লাখ ৯৩ হাজার ৫৯৯ টি, বলদ গরু ৪২ হাজার ৭৪৬ টি, গাভি ৮০ হাজার ৪২৬ টি, মহিষ দুই হাজার ৩০৪ টি, ছাগল তিন লাখ ৮০ হাজার ৬৩২ টি ও ভেড়া ৪৭ হাজার ১৪০ টি।