
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী লি জে-মিয়ং এক ঐতিহাসিক বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পিপল পাওয়ার পার্টির প্রার্থী কিম মুন-সু ইতোমধ্যে পরাজয় স্বীকার করে লি জে-মিয়ংকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। জনগণের এই রায়কে গত ছয় মাস আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সক ইয়ল-এর সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে একটি গণভোট হিসেবেই দেখছেন অনেক বিশ্লেষক।
নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেওয়া ভাষণে লি জে-মিয়ং দেশ পুনর্গঠনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, "আমার সরকার অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং কোরীয় উপদ্বীপে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে।" তার এই বক্তব্য দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিকে, পিপল পাওয়ার পার্টির প্রার্থী কিম মুন-সু এক বিবৃতিতে বলেন, "আমি জনগণের রায়কে শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে নিচ্ছি। লি জে-মিয়ংকে তার বিজয়ের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।"
লি জে-মিয়ং তার নির্বাচনী প্রচারণায় সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। এটি তার জয়ের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। জনগণের এই নির্বাচনে ইউন সক ইয়ল-এর দলকে প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দলকে ক্ষমতায় আনা দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে এক নতুন মোড় সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচন আসলে সাবেক প্রেসিডেন্টের সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন।
লি জে-মিয়ংয়ের রাজনৈতিক জীবন অবশ্য বিতর্কে ঘেরা। তিন বছর আগে তিনি নির্বাচনে পরাজিত হন এবং বর্তমানে তার বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি অভিযোগও রয়েছে। তবে এবারের প্রচারে তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শের বিভাজনকে অতিক্রম করে নানা শ্রেণিপেশার মানুষকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছেন। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এই সংকটময় সময়ে তিনিই কোরিয়াকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারেন।
নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ংয়ের সামনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কোরিয়ার শুল্কনীতি এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনার প্রয়োজন হবে।
বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকির মুখে দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েন থাকলেও শোনা যাচ্ছে, ওয়াশিংটন কিছু সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে। লি অতীতে দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র জোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও নির্বাচনী প্রচারে তিনি কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিয়েছেন। তবে তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, যা ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ককে কিছুটা জটিল করে তুলতে পারে।
লি জে-মিয়ংয়ের এই জয় দক্ষিণ কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কী ধরনের পরিবর্তন আনবে, তা দেখার জন্য বিশ্ববাসী তাকিয়ে আছে।
Comments