ন্যায্য দাম ও হয়রানির শঙ্কায়
সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি নিয়ে কৃষকদের অনীহা

চড়া দামে সার, কীটনাশক ও সেচ বাবদ খরচ করেও ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ বারহাট্টার কৃষকরা। চলতি বাজারে প্রতি মণ ধান ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হলেও, কৃষকদের অভিযোগ, প্রতি মণ ধানের সাথে অতিরিক্ত ৪-৫ কেজি ধান দিতে বাধ্য করা হচ্ছে তাদের। ফলে উৎপাদন খরচের সাথে বিক্রির হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
সরকার চলতি মৌসুমে প্রতি মণ শুকনো ধানের মূল্য ১৪৪০ টাকা নির্ধারণ করলেও, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করছেন কৃষকরা।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ২১০০ কৃষক সরকারি গুদামে ধান বিক্রির জন্য আবেদন করেছেন। বারহাট্টা উপজেলার দুটি খাদ্য গুদামে মোট ১০৮৯ মেট্রিক টন ধান ও ৬৬৭২ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, কৃষকদের সরকারি গুদামে ধান বিক্রির জন্য উৎসাহিত করতে তিনি সম্প্রতি মাইকিংও করেছেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত প্রচারণার পরেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১ টন ধান কেনা সম্ভব হয়েছে।
বারহাট্টা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর জানান, তাদের কাছে ৭টি ইউনিয়ন থেকে ৫৬১ জন কৃষকের তালিকা পৌঁছেছে। গত মাসের ২৭ তারিখে ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও, এখন পর্যন্ত শুধু আসমা ইউনিয়নের গুমুরিয়া গ্রামের মোস্তফা নামক এক কৃষকের কাছ থেকে ১ টন ধান কেনা হয়েছে। অন্য কোনো কৃষক এখনও ধান নিয়ে আসেননি। গুদামে ধান দিতে হলে ধানে ১৪% এর বেশি আর্দ্রতা থাকা গ্রহণযোগ্য নয়, সম্ভবত এটিই কৃষকদের অনীহার কারণ। তবে এই কর্মকর্তা ১৬৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি গুদামে ধান নিয়ে গেলে তাদের বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রথমত, ধানের নমুনা নিয়ে আর্দ্রতা পরীক্ষা করা হয়। এরপর শুকানো ধান গুদামে নিয়ে গেলে সেখানকার লোকজন উপরের বস্তার ধান ভালো এবং নিচের বস্তার ধান ভেজা ইত্যাদি অজুহাতে হয়রানি করে থাকেন।
বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, তাদের অফিসে ধান পরীক্ষার জন্য আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র রয়েছে। কৃষকরা প্রথমে অল্প পরিমাণ ধানের নমুনা নিয়ে এসে এখানে পরীক্ষা করিয়ে গেলে ১৪% আর্দ্রতা নিশ্চিত হলে গুদামে আর হয়রানির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
কতজন কৃষক আবেদন করেছেন এবং এখনও আবেদনের সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, বারহাট্টা উপজেলায় প্রায় ৩৪ হাজার কৃষক রয়েছেন এবং এ পর্যন্ত ১৬১৬ জন কৃষক সরকারি গুদামে ধান দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আবেদনের তালিকাটি ইতোমধ্যেই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং এখনও ধান বিক্রির জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে কৃষি বিভাগ কৃষকদের সহযোগিতা করার কথা বললেও, ন্যায্য দাম প্রাপ্তি এবং হয়রানিমুক্ত পরিবেশে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে না পারায় অনেক কৃষকই ফড়িয়া ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এমতাবস্থায়, সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার প্রক্রিয়া আরও সহজ ও হয়রানিমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
Comments