Image description

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ২০ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। শনিবার (৩ মে) ১৩১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

এর আগে, গত ১৬ মার্চ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হলো।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আসামিপক্ষের আইনজীবী, আসামিদের পরিবারের সদস্য এবং ভিকটিম আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ ও বাবা বরকত উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবরার ফাইয়াজ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, "রায় বহাল রয়েছে। আমরা অবশ্যই সন্তুষ্ট। আশা করবো দ্রুত যে প্রক্রিয়াগুলো আছে সেগুলো সম্পন্ন করে রায় কার্যকর করা হয়।"

আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহও নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সরকারের কাছে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান।

এক আসামির জেল থেকে পালানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "এটা আমরা ছয় মাস পরে জানলাম। এটা আমাদের কাছে প্রশ্ন না করে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন করাই ভালো। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না।"

এর আগে, শুনানি শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৬ মার্চ আদালত এই রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানসহ একাধিক ডেপুটি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহানসহ অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর এই আলোচিত হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন: মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম ওরফে তানভির, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, মো. সাদাত এ এস এম নাজমুস সাদাত, মুনতাসির আল জেমী, মো. মিজানুর রহমান মিজান, এস এম মাহমুদ সেতু, সামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এহতেশামুল রাব্বি অরফে তানিম, মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল প্রকাশ জিসান ও মুজতবা রাফিদ।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন: অমিত সাহা, ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, মো. আকাশ হোসেন, মুহতাসিম ফুয়াদ ও মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা।

ফেসবুকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার অসম চুক্তি ও পানি আগ্রাসন নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাদের কক্ষে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পরদিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।