Image description

‘সুড়ঙ্গ’ থেকে ‘দাগি’, ‘ময়না’ থেকে ‘জেরিন’-দুটি চরিত্রের পার্থক্য বোঝাতে কিছু সময় নীরব থেকে হেঁটেছেন নিজেকে বিনির্মাণ করতে। মাঝের সময়টুকু তার অভিনয় জীবনের সেতু হিসাবে কাজে লাগিয়ে পরিপূর্ণ অভিনেত্রী হয়ে উঠেছেন। তার শ্রম-সাধনা আলোর মশাল হয়ে হাজির হয়েছে- তিনি অভিনয় করেন না, পর্দায় বাস্তব জীবনের ছবি আঁকেন শব্দে-ভঙ্গিমায়। বলছিলাম ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তমা মির্জার কথা। ঢাকাই সিনেমার দর্শকপ্রিয় নায়িকা তমা মির্জাকে গড়পড়তা কাজে খুব বেশি দেখা যায় না।বেছে বেছে কাজ করেন সৌন্দর্যের দ্যুতি ও অভিনয় দক্ষতাসম্পন্ন এ নায়িকা।

দু’বছর আগে ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল তার অভিনীত ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমা। মাঝে বিরতি দিয়ে এ ঈদেও পর্দায় হাজির হয়েছেন ‘দাগি’ সিনেমা নিয়ে। তিনি বেশ সুসময় পার করছেন ক্যারিয়ারে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে চিত্রনায়িকার খোলস থেকে বের হয়ে নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন। যারা ইতোমধ্যে ‘সুড়ঙ্গ’ দেখেছেন তারা তমা মির্জার অভিনয়ের সক্ষমতা নিয়ে খুব ভালো জানেন। তার সাবলীল উপস্থাপন, চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়া দাগি সিনেমাতেও দারুণভাবে প্রকাশ পেয়েছে। চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে কখন কতটুকু মেলে ধরা জরুরি তমা তা রপ্ত করেছেন। বড় পর্দায় তিনি কেবল নায়িকা সুলভ না হয়ে দক্ষ অভিনয়শিল্পী হয়ে উঠেছেনÑ যা দর্শকের ভালো লেগেছে। মুগ্ধ হয়ে পুরো সময় পর্দায় মনোযোগ দিয়ে সিনেমা দেখছেন। বলতেই হয়- ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’, ‘ফ্রাইডে’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘আমলনামা’ থেকে ‘দাগি’ অভিনেত্রী হিসেবে আরও পরিণত হয়েছেন তমা। প্রথম অংশে বেকার প্রেমিককে নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত জেরিন থেকে দ্বিতীয়ার্ধের পরিণত জেরিন হিসেবে তাকে মনে রাখতেই হবে। ‘দাগি’ তমার ক্যারিয়ারে যোগ করেছে নতুন পালক। ‘দাগি’ ও জেরিন চরিত্র নিয়ে কথা হয় তমার সঙ্গে। তিনি ধারাপাতের প্রতিপৃষ্ঠায় মিলিয়ে দিলেন অঙ্কের ফল। তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান; নিজেকে পলিশ করে ত্রুটিগুলো জমা রাখতে চান স্মৃতির আলমিরাতে। সৃষ্টির ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে রাখতে চান তার দর্শকের আশীর্বাদ। বাংলা সিনেমার দর্শক তমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন, যে প্রত্যাশা নিয়ে দর্শক হলে যান সেই প্রত্যাশা পূরণের বাতি জ্বালিয়েই ফেরে দর্শক। দাগির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছেÑ নিরাশ করেননি তমা, বরং অতীতের চেয়ে আলো একটু বেশিই ছিল।

সিনেমাটির গল্পও ভিন্নরকম। গল্প ছাড়া চরিত্র ফুটে তোলা যায় না, তার চরিত্রকে ফুটে তুলতে গল্প সহযোগিতা করেছে। ‘জেরিন’ চরিত্রে নিশোকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন তমা মির্জা। ‘একটুখানি মন’ গানের গল্পটি নিশান ও জেরিনের প্রেমের। তাদের সম্পর্কের কিছু পথ পেরিয়ে যাবার পর থেকে গল্পের বর্ণনা এমন নিশানের জন্য ফুল কুড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছে জেরিনের; সঙ্গে কিছু ভুলও। ইচ্ছে কাজল চোখে নিশানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে দেয়ার। নিশানের ইচ্ছেও কম কিছু না। জেরিনকে ভেবে সন্ধ্যা নামাতে চায় সে। জমানো কান্না আর অভিমান ভুলে ফিরে আসার বাসনা নিশানের। জেরিনও জানে, তাকে ছেড়ে নিশান আর কোথায় যাবে! নিশানের বিশ্বাস, তার জন্ম-মৃত্যুও জানে, জেরিন ছাড়া তার জীবন শূন্য। ট্রেলারে যেমন প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছিল, গল্পটা তেমনই। এক দাগির প্রায়শ্চিত্তের যাত্রা। প্রেক্ষাপট উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুর, সময়কাল চলতি শতকের প্রথম দিক। নিশান আর জেরিন এই মফস্বল শহরের প্রেমিক যুগল। সম্পর্ক, আবেগ, সামাজিক বাস্তবতা আর নিশানের মানসিক টানাপোড়েন নিয়ে এগিয়ে চলে গল্প। গল্পের ছায়ায় রাখেন দর্শকের মনোযোগ। দর্শকের মনোযোগই ছবিটি ব্যবসা সফল করেছে। সিনেমাটি যেমন ব্যবসা সফলতা পেয়েছে, তেমনি তমাকে নিয়ে গেছে অনেক উচ্চতায়। এবার ঈদে তার অভিনয় দাগ কেটেছে দর্শকের হƒদয়ে। তমা মির্জার আনন্দ দেখেই আঁচ করা যায়। দর্শকের আগ্রহ নিয়ে তমা বলেনÑ ‘ঈদের দিন থেকেই প্রতিটি শো হাউসফুল যাচ্ছে। দর্শকও ভালো ভালো রিভিউ দিচ্ছেন আমাদের সিনেমা নিয়ে। পাশাপাশি সবচেয়ে খুশির ব্যাপার হলো দর্শকদের চাপে সিনেমার শো সংখ্যাও কিন্তু ইতোমধ্যে বেড়েছে। এটা সিনেমার জন্য ইতিবাচক। কারণ, দর্শক পছন্দ না করলে শো বাড়ত না।’

তমার সঙ্গে দর্শকও একমত। নিলুফা নামের এক দর্শক বলেন- ‘দাগি হƒদয়ে দাগ কেটেছে। সবার অভিনয় ও লুক ভালো লেগেছে, তবে বিশেষভাবে বলতে হয় তমা আপুর কথা। তার অভিনয় ছিল অসাধারণ।’

এবার ঈদে মোট ছয়টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে শাকিব খান অভিনীত দুটি। বড় আয়োজনের সব সিনেমার মধ্যে ‘দাগি’ নিয়ে আগে থেকেই কোনো চাপে ছিলেন না নায়িকা তমা মির্জার। মুক্তির পর দর্শক আগ্রহে বুঝাই যাচ্ছে কেন ‘চিল মুডে’ ছিলেন তিনি। ঈদের ছয় সিনেমার মধ্যে দর্শক আগ্রহে রয়েছে তমার ‘দাগি’। মুক্তির পর থেকেই সিনেপ্লেক্সগুলোয় হাউসফুল যাচ্ছে। তাই দর্শকের চাহিদায় বাড়ছে সিনেমার শো। প্রযোজনা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এর বাইরে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তির পরিকল্পনাও রয়েছে। এদিকে সিনেমার এমন সাফল্যে ও দর্শক সাড়ায় মুগ্ধ নায়িকা তমা মির্জা। সবমিলিয়ে দর্শকের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় আপ্ল“ত এ নায়িকা।

এবার ঈদে মুক্তি পাওয়া অন্য সিনেমাগুলো দেখেছেন কিনা, এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন- “আমার প্ল্যান ছিল পর্যায়ক্রমে সিনেমাগুলো দেখব। বিশেষ করে ‘বরবাদ’ এবং ‘জংলি’ দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। কারণ প্রোমোশনালি বলো, লুক বলো, ট্রেইলার, টিজার যেটাই বলো আমার কাছে খুব আমার কাছে এই দুইটি সিনেমা খুব প্রমিজিং লেগেছে। আমার মনে হয়েছে একজন আর্টিস্ট হিসেবে এই দুটা সিনেমা আমার দেখা উচিত। কিন্তু আমি একটুও সময় পাইনি। কারণ ‘দাগি’ সিনেমাটা যে হলে চলছে এই কথাটা ষোলো কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি মানুষও ঠিকঠাক মতো জানে না। এই খবরটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য নানা প্রচারণায় অংশ নিতে হয়েছে। তবে অবশ্যই সময় করে দেখব।” আফরান নিশো ও তমা মির্জা ছাড়াও অভিনয় করেছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, রাশেদ মামুন অপু।

উল্লেখ্য, আলোচিত জুটি আফরান নিশো-তমা মির্জা অভিনীত সিনেমা ‘দাগি’। সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন। এটি প্রযোজনা করেছে এসভিএফ আলফা আই এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড ও চরকি। ঈদে মুক্তির পর থেকেই সিনেপ্লেক্সগুলোয় হাউসফুল যাচ্ছে সিনেমাটি। দর্শকের প্রশংসা পাচ্ছেন সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ‘দাগি’র সবচেয়ে বড় শক্তি এর চিত্রনাট্য, সংলাপ আর অভিনয়। মফস্বল শহরের চেনা সব চরিত্র, চিত্রনাট্য, দুর্দান্ত নির্মাণ, মনে রাখার মতো সংলাপ আর বিশ্বাস্য অভিনয় মিলিয়ে ‘দাগি’ হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ের অনবদ্য বাংলা সিনেমা। ‘দাগি’ তমা মির্জার ক্যারিয়ারে যোগ করেছে নতুন পালক- যে পালকের আলোয় তমা এগিয়ে যাবেন নতুন পালকের দিকে। দর্শকও প্রত্যাশা করেন- তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে যাক প্রতিনিয়ত, বাংলা সিনেমার তালিকায় যুক্ত হোক ‘সুড়ঙ্গ’ ও ‘দাগি’র মতো আরো ভালো সিনেমা। বাংলা সিনেমায় ফিরে আসুক সোনালি দিন-এমন প্রত্যাশা সবার।