Image description

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নানামুখী আলোচনার মাধ্যমে গঠন হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার গঠনের পর থেকেই আলোচনা শুরু হয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার যখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই প্রশ্ন উঠেছে-নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার? দেশের মানুষ সবকিছুর স্থিরতা চাচ্ছেন, তাই এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তুতি দৃশ্যমান না হওয়ায় কবে ভোট সম্পন্ন হবে এ নিয়ে গুঞ্জনের ডালপালা মেলছে সর্বত্র।

অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবরই বলে আসছেন ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যেই নির্বাচন হবে দেশে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আরও একধাপ এগিয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রস্তুত করছে। এরইমধ্যে নির্বাচনপূর্ব ২২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করে অক্টোবরের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করার টার্গেট নিয়েছে। যাতে ডিসেম্বরে ভোট আয়োজন করার তফসিল ঘোষণা করা যায়। 

গতকাল প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা যায়- ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, আইন-বিধি সংস্কার, ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্র স্থাপনসহ প্রাথমিকভাবে ২২টি বিষয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছে কমিশন। দুয়েকটি বিষয় ছাড়া সবগুলো কাজ অক্টোবরের মধ্যে সমাপ্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসি সচিবালয়ের। 

এদিকে সরকার গঠনের পর বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। এরমধ্যে কোনোটি দৃশ্যমান আবার কোনোটি অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার বা নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন- এ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও দেশবাসী এখন ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। কিন্তু ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন- ‘সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট করতে শিগগিরই অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে কমিশন। আমরা শিগগিরই কর্মপরিকল্পনা করবো, যেটাকে ইংরেজিতে বলতে পারেন রোডম্যাপ। ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ধরেই রোডম্যাপ চ‚ড়ান্ত করার বিষয়টি এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।’ এদিকে বিধিমালা পরিবর্তন নিয়েই ভাবছে ইসি। 

জানা যায়- আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আরপিওতে প্রক্সি পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ইসি। বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও ভাই-বোনের সন্তানরা প্রবাসী ভোটারের পক্ষে প্রক্সি ভোট দিতে পারবেন। এ পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ তিনটি ভোট দিতে পারবেন একজন। এছাড়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পোস্টারের ব্যবহার বন্ধের কথাও ভাবছে ইসি। পাশাপাশি কোনো ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, ট্রেন বা অন্য কোনো যানবাহন সহকারে জনসভা কিংবা মশাল নিয়ে জনসভা না করা এবং মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়েও শোডাউন না করার বিষয়টিও কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। 

প্রশ্ন হচ্ছে- সবকিছু ইতিবাচকভাবে যাছাই-বাছাই করে জনমুখী সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেয়াটাই হচ্ছে এ সরকার ও ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে নির্বাচন না হলে দেশের সংকট-অনিশ্চয়তা কাটবে না। সংস্কারের ব্যাপারে কারও কোনো আপত্তি নেই। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়া। সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন। আবার অনেকে বলছেন, সংস্কার শেষে নির্বাচন। এ অবস্থায় জনমনে প্রশ্ন উঠছে আগে সংস্কার নাকি নির্বাচন। এরমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ আটমাস মাস পেরিয়ে গেছে। সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে।

নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান, দুর্নীতি দমনসহ ১০টি বিষয়ে সংস্কারের জন্য সরকার কমিশন গঠন করেছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে বলা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের প্রত্যাশা আর কেউ পূরণ করতে পারবে না। নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল।

প্রশ্ন হচ্ছে- বর্তমান সরকার কি সহসায় নির্বাচনের পথে হাঁটবেন? দুঃখজনক হলেও সত্য সংস্কার বা নির্বাচন কোনো কিছুরই দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ইতোমধ্যে নানা বিষয়ে রাজনৈতিক দল এবং আদর্শের বিরোধ গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইসির পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসলে বোঝা যাবে নির্বাচন নিয়ে সরকার কী ভাবছেন?

মনে রাখতে হবে- নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা জনগণের প্রধান প্রত্যাশা, যা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন সময়ের দাবি। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা এবং জনগণের আস্থা অর্জনে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে প্রথমেই প্রয়োজন হবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন।

নির্বাচন কমিশনের সফলতা নির্ভর করবে তাদের প্রজ্ঞা, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার ওপর। কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে দৃঢ়তা ও সাহসিকতা থাকতে হবে। অতীতের ব্যর্থতাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সেগুলো অতিক্রম করার উদ্যোগ নিতে হবে। জনগণের কথা ভেবে নিকট অতীতের ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনে অবাধে ভোট দেয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলেই- সুস্থ, সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমাদের চাওয়া- সরকার সময়ক্ষেপণ না করে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। দেশ ও জনগণের স্বার্থেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমলে নেবে- এমন প্রত্যাশা সবার।