
১০ বছর আগের কথা। তখন আমার বয়স ৩০ বছর। অভাবের সংসারেও জীবন কাটতো আমাদের। চারিদিকে ছিল ঘোর অন্ধকার। অভাবের যন্ত্রণায় কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন অন্যজনের কথায় ইট ভাঙ্গার কাজে লেগে যাই। বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ইট ভাঙ্গার কাজ করি। মানুষের বাড়িতে প্রতি বর্গ ফুট হিসাবে ইট ভাঙ্গা শুরু করি। তখন ১ ফুট ইট ভাঙ্গতে ১৬টাকা মজুরি ছিল। এর পর থেকে স্বামী সন্তান নিয়ে ইট ভাঙ্গা শুরু করি।
এভাবেই ইট ভাঙ্গা শ্রমে সংসার চলার কথা জানাচ্ছিলেন জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের তেলিয়া লামা পারা গ্রামের এক নারি। শুধু তিনি ই নয় তার মত আরো অনেক নারী ইট ভেঙ্গে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। এক সময় লাজ লজ্জার ভয়ে কেউ আসতে চাইতোনা। বর্তমানে তাঁর মত অনেক নারীরাই ইট ভেঙ্গে সংসার চালাচ্ছেন। কেউ ইট কুড়িয়ে ভেঙ্গে জীবন চালায় আবার কেউ ফুট হিসাবে কাজ করে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায় কেউ রাস্তার পাশে আবার কেউ বাড়ির আঙ্গিনায় ইট ভাঙ্গার কাজ করছেন। বিভিন্ন বয়সের নারীরা ইট ভাঙ্গার কাজ করছেন। কোন স্থানে একা আবার কোন স্থানে দল বেঁধে কাজ করছেন। ইট ভাঙ্গা কাজের জন্য নারী পুরুষের ধরা বাধা কোন সময় মানতে হয়না। সংসারের অন্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে দিনে রাতে যখন ইচ্ছা তখন ইট ভাঙ্গে। ইট ভেঙ্গে প্রতি ফুট সুরখী করলে পাওয়া যায় ২০ টাকা একদিনে ৩০-৩৫ ফুট সুরখী ভাংতে পারেন তারা।
ইট ভাঙ্গা শ্রমিকরা বলেন পুরুষেরা হাওরে কৃষিকাজ ও ব্যবসা বানিজ্য করে বিভিন্ন পেশায় রোজগার করতে পারে সাথে ইট ভাঙ্গা কাজে নারীদের আয় সংসারের ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়াসহ সংসারের খরচ জোগান দেই। ১০ বছর আগে প্রতি ফুট ইট ভেঙ্গে পেতাম ১৬ টাকা এখন জিনিষ পত্রের দাম দিগুন হারে বারলেও বারেনি আমাদের মুজুরি। ১০ বছরের ব্যবধানে প্রতি ফুটে ৪ টাকা করে বেড়েছে। যার কারনে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি হওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ইট ও বালু পাথর মালিক মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন 'প্রতিদিন ইট ভেঙ্গে নারী শ্রমিকরা প্রতি ফুটে ২০টাকা করে পায়। প্রতিদিন ১ জন নারী শ্রমিক ৩০ থেকে ৩৫ ফুট ইট ভাংতে পারে। এতে করে প্রতিটি শ্রমিক ৭০০ টাকা মত পায়। ইট ভাঙ্গার জন্য এখন মেশিন তৈরি হয়েছে। তারপরও তাদের কথা চিন্তা করে মেশিনে ইট না ভেঙ্গে তাদের দিয়ে ভাংগাই। হাতে ভাঙ্গে ইটের শুরকী। মেশিনের চেয়ে মালের দিক দিয়ে ভালো হয়।'
জামালগঞ্জ সদর ইউপি সদস্য মো. মমিন মিয়া বলেন, 'আমার ওয়ার্ডে ইট ভেঙ্গে অনেক নারীরা সংসারে খরচ চালাচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন স্থাপনা, পাকা ভবন ও বাড়ী নির্মাণ হচ্ছে। নারীদের ইট ভাঙ্গায় শ্রমে তাদের সংসারের আয় অনেকটাই বেড়েছে।'
মানবকণ্ঠ/এসআর
Comments