Image description

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে ছাত্র ইউনিয়নের অংশ নেওয়া নিয়ে চলছে বিতর্ক। তবে সেখানে অংশ নেওয়া ব্যক্তি ছাত্র ইউনিয়নের কেউ নয় বলে জানিয়েছে সংগঠনটির একাংশের নেতারা। বুধবার (১৪ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে বিষয়টি জানা যায়।

গত বৃহস্পতিবার লিয়াজোঁ কমিটি ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে সভা করে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়। এতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ ৩৫টি সংগঠন উপস্থিত ছিল বলে জানানো হয়।

বৈঠকে  রাগীব নাঈম-রাকিবুল রনি নেতৃত্বাধীন একাংশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি মেঘমোল্লার বসু অংশ নেয়। এ ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের মাহির শাহরিয়ার রেজা ও বাহাউদ্দিন শুভ নেতৃত্বাধীন অংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

বুধবার (১৪ আগস্ট) এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, রাগীব নাঈমরা ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্বশীল অংশ নয়। রাজনৈতিকভাবে এবং নেতৃত্ব প্রাপ্তিতে পরাজিত হবার ভয় থেকে কিছু প্রতিনিধি কাউন্সিল হাউজ থেকে বেরিয়ে তথাকথিত কমিটি গঠন করেছে। এরপর থেকেই তারা বিতর্কিত ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কার্যকলাপ পরিচালনা করে ছাত্র ইউনিয়নের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করে আসছে। একাত্তরের পরাজিত ঘাতক শক্তি ছাত্র শিবিরের সাথে একই আলোচনায় অংশগ্রহণ পর্যন্ত করেছে।

এতে বলা হয়, গত ১২ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সাথে ছাত্র সংগঠনগুলোর সভার তথ্য গণমাধ্যমে আসার পরেই ছাত্র ইউনিয়নের সেই সভায় উপস্থিত না থাকার তথ্যটি গতকাল (১৩ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমে প্রেরিত বিবৃতির মাধ্যমে নিশ্চিত করার পর আমরা জানতে পেরেছি রাগীব নাঈম এবং রাকিবুল রনি নেতৃত্বাধীন তথাকথিত কমিটি ছাত্র ইউনিয়নের হয়ে উক্ত সভায় প্রতিনিধিত্ব করেছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, রাগীব নাঈমরা ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্বশীল অংশ নয়।

তারা বলেন, ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলন থেকে রাজনৈতিকভাবে এবং নেতৃত্ব প্রাপ্তিতে পরাজিত হবার ভয় থেকে কিছুসংখ্যক সম্মেলনের প্রতিনিধি কাউন্সিল হাউজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে পরবর্তীতে নিজেদের উদ্যোগে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল একটি তথাকথিত কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে। বলাবাহুল্য, ছাত্র ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র এমন কোন কমিটি অনুমোদন করে না। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত ছাত্র ইউনিয়নের ৪১তম জাতীয় সম্মেলনে তাদেরকে পুনরায় সংগঠনে যুক্ত করার প্রচেষ্টা করা হলেও পুনরায় তারা রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হওয়ার ভয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অনুষ্ঠিত মূল কাউন্সিল হাউস ত্যাগ করে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে একটি তথাকথিত কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে, বর্তমানে যার নেতৃত্বে রয়েছেন রাগীব নাঈম এবং রাকিবুল রনি। তথাকথিত সেই কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করার পর থেকেই তারা নানান বিতর্কিত এবং ছাত্র ইউনিয়নের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কার্যকলাপ পরিচালনা করে ছাত্র ইউনিয়নের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করে আসছে। ধর্ষককে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় প্রদান, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তোষণ এবং সর্বশেষ গত ১২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একাত্তরের পরাজিত ঘাতক শক্তি ছাত্রশিবিরের সাথে একই আলোচনায় অংশগ্রহণ।

রাগীব নাঈম এবং রাকিবুল রনি নেতৃত্বাধীন কমিটির কার্যকলাপ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে নেতারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাকারী শক্তি ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধে তাদের ধিকৃত কার্যকলাপের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নাই। মুক্তিযুদ্ধে নিজস্ব গেরিলা বাহিনী নিয়ে অংশগ্রহণকারী সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে স্বভাবতই তার কোন আলোচনা বা ঐক্য হতে পারে না। রাগীব নাঈম এবং রাকিবুল রনি নেতৃত্বাধীন তথাকথিত কমিটি ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব করে না। রাগীব নাঈম এবং রাকিবুল রনি নেতৃত্বাধীন তথাকথিত কমিটির কোন কার্যকলাপের দায় ছাত্র ইউনিয়নের নয়। ছাত্র ইউনিয়নের আদর্শ, ঘোষণাপত্র এবং গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কেউ নিজেকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মী দাবি করার নৈতিকতা রাখে না। ছাত্র ইউনিয়ন স্বৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বাত্মকভাবে সামিল হয়েছে এবং স্বৈরাচার হাসিনা বিরোধী সংগ্রামে ছাত্র ইউনিয়নের দুইজন কর্মী শহীদ হয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা তাদের আদর্শ এবং সংগ্রাম সম্পর্কে অবগত। আগামীদিনে ছাত্র ইউনিয়ন গণতন্ত্র এবং সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে, একইসাথে সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার ইতিহাস অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছুপা হবে না।