Image description

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঢাকার ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রান্তিক ও বড় খামারিরাও গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার না করে দেশীয় সবুজ ঘাস-খড়ের পাশাপাশি খৈল, লাউ, ছোলা, ভুসি ও কাঁচা গাছ খাওয়ানোর মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করছেন খামারিরা। উপজেলায় বর্তমানে ৫২ হাজারের বেশি পশু ঈদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও  ধামরাইয়ে ২৩ হাজার কোরবানির পশু চাহিদার থেকে বেশি প্রস্তুত করা হয়েছে। ধামরাই উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জায়গার চাহিদা মিটাটে সাহায্য করবে। 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, ধামরাই উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোটাতাজাকরণ খামারের সংখ্যা রয়েছে ৩ টি। এতে খামারসহ ধামরাইতে প্রায় ৫২ হাজার ৪ শত ৬২ টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। চাহিদা মিটিয়েও প্রায় ২৩ হাজার বেশি পশু রয়েছে।এতে গাভি/ বকনা গরু রয়েছে ১৩২০ টি, ষাঁড়/ বলদ রয়েছে ৩২ হাজার ৪৬৫ টি, মহিষ রয়েছে ৪২ টি, ছাগল ১৬ হাজার ৪২০ টি এবং ভেড়া রয়েছে প্রায় ২ হাজার ১৫ টি। এতে মোট প্রায় ৫২ হাজার ৪৬২ টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আসন্ন কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা মিটিয়েও প্রায় ২৩ হাজারের বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে।  যা উপজেলার চাহিদা মিটিেয় দেশের অন্যানঢ এলাকার চাহিদা মেটানো সম্ভব।

ধামরাই উপজেলায় সুপ্রীপ এগ্রো খামার, জি এস ই রেঞ্জ খামার ও আয়েন এগ্রো খামার রয়েছে। এছাড়াও এসডিআই এনজিওর মাধ্যমেও শত শত গরু মোটা তাজা করন করা হয়েছে। 

খামারিরা জানান, গো-খাদ্য ও ওষুধের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গবাদিপশু পালন করা এখন লোকসান গুণতে হচ্ছে। খাবারের দাম অনেক বেশি।  খাবারের জন্য টাকা খরচ হওয়ায় গবাদি পশুর দাম খুব একটা বেশি নয়। তারপরও যদি সকল গবাদি পশু ঈদের আগে  বিক্রি করা যায় তবে লাভবান হবে খামার মালিকরা।

উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়নের সিংশ্রী এলাকার সুপ্রিম এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার সুভ জানান, আমাদের খামারে ১০০ ভাগ প্রাকৃতিকভাবে গরু লালন পালন করে থাকেন থাকি। গরুর জন্য  খড়, ভুসি, খৈল, সয়াবিনের সঙ্গে সাইলেজ (ভুট্টা গাছের কাটা টুকরা টুকরা অংশ) মিশিয়ে খাবার দেওয়া হয়। খামারে দেশি, গীর, শাহীওয়াল, সিন্ধি, ব্রাম্যাসহ বিভিন্ন জাতের ৩৫০টি গরু রয়েছে। তার মধ্যে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১০০টি। এখানে ১৮০ কেজি থেকে ১০০০ হাজার কেজি ওজনের গরু রয়েছে। গরু মোটাতাজা করনের জন্য কোন প্রকার এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন ডেক্সামিথাসন, স্টেরয়েড, হরমোন, ডেকাসন জাতীয় কোন প্রকার ইনজেকশন দেওয়া হয় না।  আমরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার ঘাস, ভূষি, খৈল জাতীয় খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজা করে থাকি। আমাদের খাসারে ৩৫০ টি গরু রয়েছে। এদের মধ্যে ১০০ টি বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ৬০ টি অলরেডি বিক্রি হয়ে গেছে। আর মাত্র ৪০ টি গরু রয়েছে। যা খামার থেকেই বিক্রি হয়ে যাবে। হাটে নিতে হবে না। 

এগ্রো ফার্মের শ্রমিক নাইম মিয়া বলেন, আমাদের খামারে গরুর জন্য প্রায় ২০ বিঘা জমিতে ঘাসের চাষ করা হয়েছে। আমরা ঘাসকে মেশিনে ছোট করে ছাটাই করি। সেই ঘাস গরুকে দেই। কোন প্রকার মেডিসিন খাওয়ানো হয় না।

আরেক শ্রমিক আমিনুল ইসলাম বলেন,  আমরা সকাল বিকাল গরুকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে থাকি। জমিতে ঘাস রয়েছে প্রচুর।  গরুকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়। এখানে প্রায় ১০০০ কেজি ওজনের বেশি গরু রয়েছে। 

এছাড়াও উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের বানেশ্বর এলাকার খামারী লোকমান হোসেন বলেন, আমার খামারে অনেকগুলো গুরু কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রস্তুত করা হয়েছে। খরচ অনেক বেশি হলেও যদি সবগুলো গরুই বিক্রি করা যায় তবে দাম ভালোই পাওয়া যাবে। আমার খামারের সবগুলো গরুই দেশিয় জাতের। প্রাকৃতিক খাবারই বেশি খাওয়ানো হয়। মোটাতাজা করণে কোন প্রকার ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় নি। আশা করছি দামের চাহিদা ভালোই হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেলিম জাহান বলেন , কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধামরাই উপজেলায় এবার ঈদকে সামনে রেখে প্রায় ৫২ হাজার ৪ শতের মতো পশু প্রস্তুত আছে। ধামরাই উপজেলার চাহিদা পূরণ করে আরো ২২ হাজারের বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের প্রান্তিক খামারিদের মাধ্যমে ধামরাইয়ের চাহিদা পূরণ করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবো।

মানবকণ্ঠ/এআই