
কোরবানি ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন— ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)
কোরবানির পশু নিখুঁত, সুন্দর, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও মধ্যবয়সী হওয়া উত্তম। তাই যে পশু দিয়ে কোরবানি করবেন, তা যতটা সম্ভব ত্রুটিমুক্ত হওয়া চাই। তবে, ছোটখাটো কিছু ত্রুটি গ্রহণযোগ্য। পশুর যেসব ত্রুটি থাকলেও কোরবানি শুদ্ধ হবে, সেগুলো হলো—
১. পশু পাগল, তবে ঘাস-পানি ঠিকমতো খায়; ২. লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা, তবে বেশির ভাগ অংশ আছে; ৩. জন্মগতভাবে শিং নেই, ৪. শিং আছে, তবে ভাঙা; ৫. কান আছে, তবে ছোট; ৬. পশুর একটি পা ভাঙা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে; ৭. পশুর গায়ে চর্মরোগ, ৮. কিছু দাঁত নেই, তবে বেশির ভাগ আছে। স্বভাবগত এক অণ্ডকোষের পশু; ৯. পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম, ১০. পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম। গর্ভবতী পশুও কোরবানি করা জায়েজ। তবে বাচ্চা দেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে—এমন পশু কোরবানি করা মাকরুহ। এক পশুর পরিবর্তে অন্য পশু কোরবানি করাও জায়েজ। জবাই করার পর পেটে বাচ্চা পেলে তা সদকা করে দেওয়া বা জবাই করে গোশত খাওয়া উভয়টি বৈধ। তবে মৃত বাচ্চা পেলে তার গোশত খাওয়া বৈধ হবে না। (হেদায়া: ৪/৪৩২; ফতোয়ায়ে শামি: ৫/২২৭)
পশুর মধ্যে বড় ধরণের ত্রুটি থাকলে কোরবানি সহিহ হবে না। যেমন— ১. দৃষ্টিশক্তি না থাকা, ২. শ্রবণশক্তি না থাকা, ৩. অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া, ৪. এই পরিমাণ লেংড়া যে জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম, ৫. লেজের বেশির ভাগ অংশ কাটা, ৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা, ৭. কানের বেশির ভাগ কাটা, ৮. গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া, ৯. পাগল হওয়ার কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া, ১০. বেশির ভাগ দাঁত না থাকা, ১১. রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া, ১২. ছাগলের দুটি দুধের যেকোনো একটি কাটা, ১৩. গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোনো দুটি কাটা।
উত্তম কোরবানির জন্য পশুর বয়সের দিকেও লক্ষ রাখতে হবে। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর পূর্ণ হতে হবে। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া যদি দেখতে মোটাতাজা হয় এবং এক বছর বয়সের মতো মনে হয়— তাহলে তা দিয়েই কোরবানি করা বৈধ। গরু-মহিষের হতে হবে পূর্ণ দুই বছর। আর উটের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে। (হেদায়া, খণ্ড: ০৪, পৃষ্ঠা-১০৩)
ছয় প্রকার পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ বা বৈধ। তা হলো- উট, গরু, ছাগল, দুম্বা, ভেড়া ও মহিষ। এসব পশু ছাড়া অন্য পশু দিয়ে কোরবানি করা বৈধ নয়। (হেদায়া : ৪/৪৪৮) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর নৈকট্যলাভের উদ্দেশ্যে ত্রুটিমুক্ত ও সুন্দর পশু কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মানবকণ্ঠ/এসআরএস
Comments