
আজ ২২মে, বাংলা নাট্য জগতের জনপ্রিয় ও গুণী অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৮ সালের এই দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। দেখতে দেখতে ছয়টি বছর পার হয়ে গেলো এই অভিনেত্রীর প্রয়াণের।
বহু নাটকে সফলতার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ। পাশাপাশি ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি থিয়েটারে অভিনয় করতেন। নাম কামিয়েছিলেন উপস্থাপনায়ও। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাজিন তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।
২০১৮ সালের ২২ মে উত্তরায় নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে স্থানীয় রিজেন্ট হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ওইদিনই বিকাল সাড়ে চারটার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরের দিন জানাজা শেষে তাজিনকে বনানী কবরস্থানে বাবা কামাল উদ্দিন আহমেদের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
তাজিন আহমেদের জন্ম হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই নোয়াখালীতে। তিনি পড়াশোনা করেন ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে। ১৯৯২ সালে এই কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। পরে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেন।
১৯৯৬ সালে ‘শেষ দেখা শেষ নয়’ নাটকের মাধ্যমে তাজিন আহমেদের অভিনয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর তিনি অসংখ্য নাটক ও টেলিছবিতে কাজ করেন। তার অভিনীত ‘আঁধারে ধবল দৃপ্তি’ নাটকটি সে সময় বেশ সাড়া ফেলেছিল। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘নীলচুড়ি’ নাটকেও তার অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। অভিনয়ে আসার আগে ১৯৯১ সালে বিটিভিতে প্রচারিত ‘চেতনা’ নামের একটি অনুষ্ঠান দিয়ে তিনি উপস্থাপনা শুরু করেন।
তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ড. মোহিত কামালের ‘মন’ উপন্যাস অবলম্বনে নাটক ‘মন’। দ্বীপঙ্কর দীপনের রচনা ও পরিচালনায় এক খণ্ডের নাটক ‘জলসত্ত্বা’ ও অরুণ চৌধুরীর রচনা ও পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘নন্দন কানন’ নাটক। আরও আছে ‘চাচা ইভেন্ট কোম্পানি’, ‘ভয়ংকর সুন্দর দিন’, ‘গ্রামের নাম শিমুলপুর’, ‘স্মৃতির আলপনা আঁকি’, ‘বিদেশি পাড়া’। এছাড়াও অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন তিনি।
নাট্যাঙ্গণে কাজ করার পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর তাজিন আহমেদ সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’-এ যোগ দিয়েছিলেন। এরপর ১৯৯৭ সালে ‘দৈনিক প্রথম আলো’তে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে তিনি এই পত্রিকাটির নিজস্ব প্রতিবেদক হন। কিছুদিন ‘আনন্দ ভূবন’ পত্রিকায় কলাম লেখক হিসেবেও কাজ করেন। পরবর্তীতে সাংবাদিকতা ছেড়ে ২০০২ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব সামলান তাজিন আহমেদ।
এসবের বাইরে লেখালেখির কাজও করতেন বহু প্রতিভাধর এ তারকা। তাজিনের লেখা গল্পের নাটকগুলোর মধ্যে ‘যাতক’, ‘যোগফল’, ‘বৃদ্ধাশ্রম’, ‘অনুর একদিন’, ‘এক আকাশের তারা’ ও সম্পর্ক’ উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে ‘যাতক’ ও যোগফল’ নাটক দুটি তিনি পরিচালনাও করেন।
অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৩ সালে ‘কথার কথা’ নাটকটির জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ৩২তম বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন তাজিন আহমেদ।
এমন একজন বহুল প্রতিভার অধিকারী অভিনেত্রীকে হারিয়ে আজও তার শূন্যতা অনুভব করে পুরো নাট্যজগৎ।
মানবকণ্ঠ/এফআই
Comments