Image description

মানবসৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত করা। পৃথিবীতে আসার পর মানুষ আল্লাহকে স্মরণে রাখবে, তাঁর ইবাদতে মশগুল থাকবে, এটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মানবজাতির বেশিরভাগই সেই স্রষ্টাকে ভুলে যায়, যিনি তার রিজিকের ব্যবস্থা করেন, বস্ত্রহীন অবস্থা থেকে আচ্ছাদন জোগাড় করেন, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সবকিছু প্রদান করেন। এরকম যে অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে রয়, তার নাম মৃত ক্বালব। সে এতটাই মৃত হয়ে যায় যে, খোদার সুদৃষ্টি তার উপর থেকে সরে যায়। সে যেমন আল্লাহকে ভুলে যায়, আল্লাহও তার নিজেকে ভুলিয়ে দেন।

পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহও তাদেরকে করেছেন আত্মভোলা। এরা পাপাচারী লোক।’ (সূরা হাশর, আয়াত: ১৯)।

জিকির থেকে বিমুখতার কারণে বান্দার অন্তর মারা যায়। ফলে আধ্যাত্মিক শক্তি হাসিল থেকে অপারগ হয়ে পড়ে। আর যে সকল হৃদয় জিকিরে ইলাহীতে নিমগ্ন থাকে, সেগুলোই কেবল জীবিত হৃদয়। জিকিরকারী ব্যক্তি এবং জিকির থেকে বঞ্চিত ব্যক্তির মধ্যে এটাই পার্থক্য। 

হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে এবং যে আল্লাহর জিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতদের মতো।’ (বুখারি: ৬৪০৭, মুসলিম : ৭৭৯)।

আল্লাহর জিকিরের গুরুত্বপূর্ণ একটা ফায়েদা হলো, এর মাধ্যমে ইমান বৃদ্ধি পায় এবং তাকওয়া দ্বারা সমৃদ্ধ হয়। এজন্য তরিকত তাসাউফের ইমাম ও বুজুর্গানে দ্বীনগণ জিকিরের প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। তাঁরা নিজনিজ অনুসারীদের দৈনন্দিন সবকের তালিকায় বিভিন্ন রকমের জিকির রাখতেন। 

আল্লাহ তায়ালা জিকিরের ফায়েদা প্রসঙ্গে বলেন: ‘যারা ইমানদার, তারা এমন লোক যে, যখন আল্লাহর জিকির করা হয়, তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। আর যখন তাদের সামনে আল্লাহর আয়াত পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় প্রভুর ওপর ভরসা করে।’ (সূরা আনফাল : ২)।

জিকিরের আরেকটা ফায়েদা হলো, এর মাধ্যমে অঢেল সাওয়াব এবং মাগফেরাত লাভ করা যায়। আল্লাহর বান্দা যখন জিকির করে, সেই জিকির রাব্বুল আলামীনের দরবারে পছন্দ হলে তিনি অগুণিত হারে বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। যথেচ্ছা সাওয়াবে ভরপুরও করে দেন। আল্লাহ তায়ালার বাণী, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর। আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। (সূরা বাকারা : ১৫২)।

অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা যদি আমার হুকুমের আনুগত্যের মাধ্যমে আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদের সওয়াব ও মাগফিরাত দানের মাধ্যমে স্মরণ করব। এটা জিকিরের বিশেষ ফজিলত। জিকিরের মাধ্যমে এই ক্ষমাপ্রদর্শনের কথা হাদিসেও বর্ণিত হয়েছে।

রাসূল (স.) এরশাদ করেন, ‘লোকেরা যদি কোনো মজলিসে বসে আল্লাহর জিকির করে, যখন মজলিস থেকে তারা উঠে, তখন তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, তোমরা ওঠ। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তোমাদের গুনাহগুলো নেকিতে পরিবর্তন করে দিয়েছেন।’ (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব : ২/৩৩৪)।

সর্বশেষ জিকিরের ফায়েদা বা উপকারিতা হলো, এর মাধ্যমে অন্তরের পঙ্কিলতা ও আবর্জনা দূরীভূত হয়। অন্তর পরিশুদ্ধতার জন্যে সালফে সালেহীন জিকিরকে প্রাধান্য দিতেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূল (স.) এরশাদ করেন: ‘প্রত্যেক বস্তু পরিষ্কার করার জন্য কোনো না কোনো উপকরণ আছে। আর অন্তরের ময়লা পরিষ্কার করার উপকরণ হলো আল্লাহর জিকির।’ (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব : ২/৩২৭)।

এজন্য জিকিরের বিকল্প নেই। অন্যান্য ইবাদতের তালিকায় জিকিরের প্রাধান্য দেয়া উচিত। ইবাদত বন্দেগিতে জিকিরের পরিমাণ যতবেশি হবে, আত্মিক পরিশুদ্ধি ও জান্নাত লাভের পথ ততই সুগম হবে।
 

মানবকণ্ঠ/এফআই