Image description

শত বাধা পেরিয়ে নিজ যোগ্যতায় এগোচ্ছে নারী। আকাশপথ থেকে স্থলপথেও। শিক্ষা, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতিসহ বিভিন্ন বাহিনীতেও তাদের উপস্থিতি দারুণ। দিন দিন নারীদের সক্রিয়তা আরও বাড়ছে উৎপাদন, প্রযুক্তি, শিক্ষাসহ প্রায় সব ক্ষেত্রের পেশায়। দেশে ফায়ার সার্ভিসে প্রথম ব্যাচের নারী অগ্নিযোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তবে নারী এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে বৈষম্যও এগোচ্ছে। বাল্যবিবাহ, অনিচ্ছাকৃত সন্তানধারণ, যৌন নির্যাতন, পাচার নারীর অগ্রগতির পথরোধ করে। অন্যদিকে শ্রমমূল্যের বৈষম্য তাদের দারুণভাবে নাড়া দেয়। শহর, পাড়া-মহল্লার গৃহকোণে চাপা কান্নার আওয়াজ বলে দেবে-নারীকে অপমান করা হয়, নির্যাতন করা হয়, হত্যা করা হয়, এসিড নিক্ষেপ করা হয়, ধর্ষণ-সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন, বাল্যবিবাহ হয়। আবার পাড়ার কিশোর-কিশোরী, স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সেই মেয়েটাই থানায় গিয়ে নিজের বিয়ে আটকেও দেয়। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার বাস্তবতায় প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্ব নারী দিবস উদ্যাপন হবে। আজ ৮ মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য-‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’।

ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুক্তভোগী নারী সমাজ বিভিন্নভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারী নির্যাতন। ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গত বছর  মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত করে। ওই প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছিল, বিগত ২০২৩ সালে ৬২৩ জন নারী ও ৭৬৮ জন শিশু ও কিশোরী যৌন নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। মহিলা পরিষদের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গেল বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৭৬৬ নারী ও কন্যাশিশু। এরপর কেটে গেছে আরও তিন মাস। ফলে সহিংসতা, নির্যাতন ও বৈষম্যের সংখ্যা আরও বেড়েছে।

১৮০ দিনের মামলা, শেষ হয়না ৫ বছরেওঃ উচ্চ আদালতের তথ্য বলছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিচারাধীন মামলা এখন দেড় লাখ ছাড়িয়েছে।  দেশের ৬৪ জেলায় ৯৯টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট বিচারাধীন মামলা ১ লাখ ৬১ হাজার ২১৮টি। এরমধ্যে ২০ শতাংশের বেশি মামলা ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন। ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্ট পরিপত্র জারি করে। সেখানে বলা হয়, নির্ধারিত ১৮০ দিনে বিচার শেষ করতে না পারলে তার কারণ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রতিবেদন দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু এই বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে না। তাই আইনটি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাদের (পুলিশ) প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।

নারীনেত্রীরা বলছেন, নারীর প্রতি এই নৃশংসতা নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য হুমকি, পাশাপাশি রাষ্ট্রের জন্যও হুমকি; যা বাংলাদেশের অগ্রসরমান ভাবমূর্তিকে ম্লান ও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরাই পারি জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক বলেন, ‘বর্তমান সরকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও পরিস্থিতি বিশ্লেষণে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। ক্রমবর্ধমান হারে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও নারী বিরোধী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা গেলে ভুক্তভোগীরা ন্যয়বিচারে আস্থা পেতো।’

মহিলা পরিষদের তথ্যঃ এদিকে গেল বছরে মহিলা পরিষদের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, জানুয়ারিতে নির্যাতনের শিকার ২৪০ নারী ও কন্যাশিশু। ফেব্রুয়ারিতে ২৩২ জন, মার্চে ২৪৯, এপ্রিলে ২৩৩, মে মাসে ৩০১, জুন মাসে ৩২৯, জুলাইয়ে ২৯৮ ও আগস্টে ২৭৩ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়। সেপ্টেম্বর মাসে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩৯ জনে। অক্টোবর মাসে ২১১ এবং নভেম্বর মাসে ১৯১ জন শিশু, কিশোরী ও নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, হত্যা, পারিবারিক সহিংসতা ও সাইবার অপরাধসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

মহিলা পরিষদ জানিয়েছিল, ২০২৩ সালে নির্যাতনের ধরনে সবচেয়ে বেশি হয়েছে হত্যা। এর পরেই আছে ধর্ষণ। এমএসএফ এর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ২৩১টি। এর মধ্যে দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১৭ জন নারী, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ১৬ জন, ধর্ষণের চেষ্টার শিকার ১১০ জন এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৪৯ জন নারী। অ্যাসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন নারী। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭২ জন। অন্যদিকে ৪২ জন প্রতিবন্ধী নারী ও শিশু বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হয়েছে। আত্মহত্যা করেছেন ৫১২ জন নারী। অপহরণ করা হয়েছে ১৫ জনকে, নিখোঁজ রয়েছেন ২২ জন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত জটিলতা ইত্যাদি কারণে এ হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে। ২০২৩ সালে ৩৫২টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ৮৩ জন নারী ও ৪ জন শিশু রয়েছে।

দেশে ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী নির্যাতন আইন সংশোধন করা হয়েছে। নারী সংক্রান্ত একমাত্র আন্তর্জাতিক চুক্তি বা সনদ হলো সিডও। এই সনদের মূল বিষয়, নারীর প্রতি সব প্রকার বৈষম্য বিলোপ বা দূরীকরণ। যেখানে রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক সব ক্ষেত্রে নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এই সনদে স্বাক্ষর করলেও দেশে নারীরা এখনও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা পিতার সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন ক্ষেত্রবিশেষে। সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য ‘অভিন্ন পারিবারিক আইন’ প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশের নারী অধিকার কর্মীরা। সিডও কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বৈবাহিক ধর্ষণের সংজ্ঞা এখনও আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত তথ্যের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন নারী অধিকার কর্মীরা। প্রতিবন্ধী নারী ও কন্যাশিশুরা ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হলেও আইন অনুযায়ী বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নির্দেশনা নেই। বেশ কয়েকটি খসড়া প্রণয়নের পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রসহ সর্বস্তরে যৌন হয়রানি রোধে তেমন কোনো আইন প্রণয়ন লক্ষ্য করা যায় না। ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত এ বিষয়ে নির্দেশনা দিলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো।

বাংলাদেশে ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলির সহজলভ্যতা, ব্যবহারকারীদের অজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বিকাশের সঙ্গে আইনি পদক্ষেপের ফাঁক থাকায় নারীরা বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিক্যাফ) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৩’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন ইউনিটে ৩০ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত অভিযোগ জমা পড়ে ৩৪ হাজার ৬০৫টি। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ২৬ হাজার ৫৯২। লিঙ্গভিত্তিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগীদের মধ্যে নারীর হার ৫৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

নারীর প্রতি অ্যাসিড সন্ত্রাস, খুবই ভয়াবহ। অ্যাসিড সন্ত্রাসে মাত্র ৯ ভাগ মামলায় সাজা হচ্ছে। ৯১ ভাগ মুক্ত হয়ে পড়ছে। অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) তথ্য অনুযায়ী, ২০ বছরে দেড় হাজারের বেশি নারী ও শিশু অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। সাজা হয়েছে মাত্র ৩৪৩ জনের। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অ্যাসিডের মামলায় ১৬ বছরে ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কারও সাজা কার্যকর করা হয়নি। অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২ অনুযায়ী ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বলা আছে।

পরিস্থিতি নাজুক হলেও নারীর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা হয় না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি জানান, নারী নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাবে, এটা স্বাভাবিক। পুরুষের করুণায় নয়, এগোচ্ছে নিজ যোগ্যতায়। কিন্তু পদে পদেই বৈষম্য। পুরুষশাষিত সমাজ যেন আঁকড়ে ধরতে চায় নারীর এগিয়ে যাওয়াকে। নির্যাতন, ধর্ষণ কমছে না, বরং বাড়ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হচ্ছে না। সহিংসতার মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।

শ্রমবাজারে বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ: তবে নানান বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারী সমাজ। স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫০ বছরে বাংলাদেশে অর্থনীতির পট পরিবর্তনে একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ। এই পাঁচ দশকে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের সফলতায় বড় অবদান রেখেছেন নারী। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৮ শতাংশ, যা পাকিস্তানে ২৩ শতাংশ। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে দেশে কর্মক্ষেত্রে নারী ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। বিবিএসের সর্বশেষ ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপে নারী হিস্যা ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ১ কোটি ৮৭ লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা-অর্থনীতির বৃহত্তর এই তিন খাতে কাজ করছেন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহিন আনামের ভাষ্য, নারী নিজ নিজ যোগ্যতায় এগোচ্ছে। কিন্তু নির্যাতন-সহিংতাও বাড়ছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন ঘরে-বাইরে, এমনকি অন্দরমহলেও। কৃষিতে নারীর স্বীকৃতি দিতে বহু বছর ধরে আন্দোলন করে আসছি, সরকারের কাছে জানাচ্ছি; কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নারী এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত জরুরি। প্রতিবন্ধী নারী সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন। কারণ, অপরাধীরা মনে করে, এদের নির্যাতন করে সহজেই পার পাওয়া যাবে। পুলিশ কিংবা আদালতে নির্যাতনের শিকার নারীরা নির্যাতনের বিষয়টি যথাযথ উপস্থাপনাই করতে পারবে না-এমন ধারণা রয়েছে নির্যাতনকারীদের মননে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস কী ও যেভাবে শুরু ঃ এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে সারাবিশ্বের মানুষ। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সংক্ষেপে আইডব্লিউডি বলা হয়ে থাকে। শ্রমিক আন্দোলন থেকেই উদ্ভূত হয় নারী দিবসের ধারণা। পরবর্তীতে দিনটি জাতিসংঘের স্বীকৃত পায় এবং প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হতে থাকে। ১৯০৮ সালে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, বেতন বৃদ্ধি এবং ভোটাধিকারের দাবিতে প্রায় ১৫,০০০ নারী নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিল। মূলত এই আন্দোলনের মাঝেই লুকিয়ে ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে নারী দিবস পালনের বীজ। এই আন্দোলনের এক বছর পর আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি সর্বপ্রথম জাতীয় নারী দিবস ঘোষণা করে।

জাতীয় পর্যায় থেকে দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পরিণত করার প্রথম উদ্যোগটি নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট ও নারী অধিকার কর্মী ক্লারা জেটকিন। ১৯১০ সালে তিনি কোপেনহেগেনে কর্মজীবী নারীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ ধারণার প্রস্তাব দেন। সেই সম্মেলনে উপস্থিত ১৭ দেশের ১০০ জন নারীর সকলেই তার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেন। এরপরের বছর, অর্থাৎ ১৯১১ সালে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ২০১১ সালে পালিত হয় দিনটির শতবর্ষ।

কেন ৮ মার্চ: আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি যখন ক্লারা উত্থাপন করেন, তখন তিনি নির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের আগ পর্যন্ত দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট করা যায়নি বলেই উল্লেখ রয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। একই বছর রুশ নারীরা ‘রুটি এবং শান্তি’-এর দাবিতে তৎকালীন জারের (রাশিয়ার সম্রাট) বিরুদ্ধে ধর্মঘট শুরু করেন; এর ৪ দিনের মাথায় গদি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল জার এবং জারের গদিতে বসা অস্থায়ী সরকার তখন নারীদের আনুষ্ঠানিক ভোটাধিকার দিয়েছিলেন। সে সময়ে রাশিয়ায় প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, নারীদের ধর্মঘট শুরু হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি। আর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এই দিনটি ছিল ৮ মার্চ; পরবর্তীতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৮ মার্চকেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস