Image description

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, “শোনা যাচ্ছে, অনেক উপদেষ্টা নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এই কথা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। দেশের মানুষ অনেক আশা-ভরসা নিয়ে একটি পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল, কিন্তু এখন উপদেষ্টাদের অনেকে ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে দুর্নীতি করছে। এতে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।”

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের তুলাগাঁও গ্রামে ‘উঠানে রাজনীতি’ শীর্ষক বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আপনারা আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে জাতিকে প্রতারিত করবেন না। যদি মনে করেন পশ্চিমের ভিসা নিশ্চিত করে, পূ‌র্বের ভিসা নি‌শ্চিত ক‌রে নিজের স্বার্থ রক্ষা করবেন, তারপর যেমন-তেমন নির্বাচন দিয়ে দেশ ছেড়ে যা‌বেন, তাহলে ছাত্র-জনতা আপনাদের ক্ষমা করবে না। আমরা দেখেছি, কিভাবে পাখির মতো গুলি করে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে। জুলাই ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের রক্তের বি‌নিম‌য়ে আপনাদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। তাই জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা ছাড়া আপনাদের কোনো বিকল্প নেই।”

তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের অনেক সাবেক মন্ত্রী-এমপি বর্ডার পাড়ি দিয়েছে। তাদের পালানোর সহযোগিতা করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। টেলিভিশনে যাদের বিরোধিতা দেখানো হতো, তারাই নাকি ভেতরে ভেতরে আত্মীয় বা বেয়াই ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে হাসনাত বলেন, “নির্বাচনের ডেডলাইন নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। চাইলে আগামীকালই নির্বাচন দিন। তবে আগে আমাদের একটি লিখিত নতুন সংবিধান দিতে হবে। যে সংবিধানে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। আমরা শুধু দারোয়ান পরিবর্তন করতে চাই না, ঘ‌রের দরজা, জানালাও ঠিকভাবে লাগাতে চাই। তাই মুখের কথা নয়, আইনগত ভিত্তি চাই। এরপর নির্বাচন দিন, জনগণ যাকে ভোট দেবে সে-ই নির্বাচিত হবে। এতে আমাদের আপত্তি নেই।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এখন শোনা যাচ্ছে, কেউ অন্যকে ভোট দিলে তার জিহ্বা কেটে ফেলবে। আবার এক দলের নেতা বলছেন, প্রতীক না থাকলে নিজেরাই ব্যালট ছাপাবে। আমরা দেখেছি, কিভাবে ভিপি নুরকে অমানবিকভাবে পেটানো হলো, অথচ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা দেখেছি, ভোটের আগে নেতারা টাকা দিয়ে আপনার-আমার মুখ বন্ধ করে রাখে। এভাবে আমাদের ভাগ্য তারা কিনে নেয়। এ টাকা কিন্তু জনগণের পকেট থেকেই আবার আদায় করা হয়। এসব বন্ধ কর‌তে এবার আমাদের শর্তগুলো লিখিত ভিত্তিতে মানতে হবে। এটাই রাষ্ট্র সংস্কারের মূল শর্ত।”

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের যত অনিয়ম-দুর্নীতি হয়, তার ভোগান্তি সইতে হয় সাধারণ মানুষকে। কোনো মন্ত্রী-এমপি ভোগান্তিতে পড়ে না। এমপি সবসময় এমপি, মন্ত্রী সবসময় মন্ত্রী। তাদের সন্তানরাও এমপি-মন্ত্রী হয়। কিন্তু খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ভাগ্য কোনোদিন পরিবর্তন হয় না। তাই এই অন্যায় ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।”

উঠান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দেবিদ্বার উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক জামাল মোহাম্মদ কবীর। 

এছাড়া বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম, এহতেশাম হক, দেবিদ্বার উপজেলা সার্চ কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।