Image description

বিএনপি আয়োজিত ঢাকা জেলায় শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কোনো সহযোগিতা পাননি বলে একজন শহীদের পরিবারের সদস্যের করার অভিযোগের জেরে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ”যাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন বেঁচে ছিলেন। সেই হত্যায় তাদেরকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। শহীদের পরিবার অভিযোগ করেছেন যে, তার স্বামীকে পুড়িয়ে মারার পরে তাকে কেউ খোঁজ নেয়নি, তাকে কেউ সহযোগিতা করে নাই। আমি ঢাকা ডিসিকে এখানে বসেই ফোন করেছিলাম, সরকার অঙ্গীকার করেছিলেন আহত এবং শহীদের পরিবারগুলোকে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দিবেন, আর যারা আহত হয়েছিলেন তাদের চিকিৎসার সমস্ত ব্যায়ভার বহন করবেন। আমি এখানে মাত্র ২ জনকে পেয়েছি যারা সেই টাকাটা পেয়েছেন।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, মুল কথা হলো হাসিনা এবং তার দোসরদের বিচার কিন্তু এখনো দৃশ্যমান হয়নি। এখনো আমরা দেখছি শহীদ পরিবার ন্যূনতম যতটুকু সহযোগিতা পাওয়া দরকার ছিল সেটুকু তারা পাইনি। এখনো দেখছি যারা পঙ্গু এবং আহত হয়েছিল, তাদের চিকিৎসা চূড়ান্ত হয়নি। এই সরকারকে আহবান জানাবো আপনাদের যে মেশিনারি আছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছেন তারা এই খবর গুলো নিয়ে যেন সহায়তা করেন। 

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেল ৪ টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দারুল ইহসান মাদ্রাসার মাঠে ঢাকা জেলা বিএনপির আয়োজনে এক জনসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, আমার নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করে, আমরা এমন একটা জাতি, যে আমাদের নিজেদের ছেলেদের পুড়িয়ে মারি। আমরা এমন একটা জাতি যে রাষ্ট্রের যারা কর্মচারী কর্মকর্তা তারা সন্তানদেরকে হত্যা করে, এমনকি পুড়িয়ে হত্যা করে। 

তিন বলেন, আমরা এমন একটা জাতি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের নেতা যারা আমাদের নেতৃত্ববলে যাদেরকে দেশের মানুষ নেতা বলে মনে করে। তারা ক্ষমতায় চিরদিন টিকে থাকার জন্য গুলি করে মানুষকে হত্যা করে। যা হাসিনা করেছে। তীব্রস্বরে দাবি এসেছে যে আমরা হাসিনার বিচার চাই, গোটা জাতি হাসিনার বিচার চায়। হাসিনা পালিয়ে গেছে ভারতে। ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন অভিও ভার্সনে, কথায়, ভিডিওতে বাংলাদেশে আবারও নৈরাজ্য সৃষ্টি করবার জন্য বিভন্নরকম উত্তেজনা ছড়ানের চেষ্টা করছে। চেষ্টা করেছেও গোপালগঞ্জে তারা সেই অবস্থার সৃষ্টি করেছে। 

এসয় তিনি আরও বলেন, একটা জাতীকে নিজের দেশকে রক্ষা করার জন্য নিজের দেশকে রক্ষা করার জন্য নিজেকে প্রত্যেকে সজাগ হয়ে থাকতে হবে। আজকে দীর্ঘ ১৫ বছর হাসিনা ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের মানুষের ওপর স্ট্রীম রোলার চালিয়েছে। যারা বিএনপি করেন, বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। অনেকে কারাগারে গেছেন। সাভার আশুলিয়ার অনেকের সাথে দেখা হয়েছে সেই কারাগারের মধ্যে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে গণতন্ত্রের জন্য আমাদের আন্দোলন, আমাদের অধিকারের জন্য যে আন্দোলন, বোটের অধিকারের জন্য আমাদের যে আন্দোলন, এই আন্দোলন তো আমাদের করার কথা ছিল না। এটা তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার কথা ছিল ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরে। কিন্তু ভাগ্য আমাদের, জোর করে ক্ষমতায় বসে সরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে ছিল। আমাদের ছাত্রদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে, জনগণের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা সেই ভয়াবহ দানবের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। এখনও কিন্ত আমরা সেই গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পারিনি। যে গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো। 

তিনি বলেন, আজকে দেশকে আবার সঠিক জায়গায় নিয়ে আসার জন্য আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে একটা ভিশন ২০-৩০ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রটাকে বদলানোর জন্য। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০২২ সালে ৩১ দফা কর্মসূচী দিয়েছিলেন এই রাষ্ট্রটাকে বদলানোর জন্য, কাঠামো বদলানোর জন্য এবং বিভিন্ন সংস্কারের জন্য।

তিনি আরও বলেন, আজকে অনেক কথা হচ্ছে, রাজনৈতিক মতানুবাদ হচ্ছে। এটা হবেই গণতন্ত্রে সেটা স্বাভাবিক। এমন কোন কিছু করবেন না যাতে আবার গণতন্ত্র ব্যাহত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমাদের সেটাই আহ্বান থাকবে। আমাদের আহ্বান থাকবে যে ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না, যাতে আবার ফেসিস্ট হাসিনা সুযোগ পায় দেশে ফিরে আসার। আমরা অনুরোধ করবো সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যে আসুন আমাদের যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো মিটিয়ে ফেলে আমরা একটি গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাই। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠিত করি। 

এদিকে ”নারকীয় জুলাই” শিরোনামে এ জনসভায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন জেলার সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়।
এর আগে সভার শুরুতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাভারে শহিদদের পরিবারের স্বজনরা বক্তব্য রাখেন। অনেকেই বক্তব্যে কান্নায় ভেঙে পড়েন।