Image description

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া ‘জুলাই সনদের খসড়া’কে ‘অসম্পূর্ণ’ এবং ‘বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছে। দলটির মতে, সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ছাড়া এ ধরনের খসড়ার মাধ্যমে সনদ গ্রহণযোগ্য নয় এবং আইনি কাঠামো ছাড়া এর বাস্তবায়ন অনিশ্চিত।

মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের সংলাপের বিরতিতে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এসব মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘এটি অসম্পূর্ণ এবং কিছু অংশ বিপজ্জনক। আজকে তারা বলছে এটা একটা নমুনা মাত্র, ভুল হয়েছে। যদি সেটাই না হয়, তাহলে মন্তব্যের দরকার নেই। তবে যদি সেটাই মূল কথা হয়, তাহলে একে গ্রহণ করা যাবে না।’

আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, জামায়াতে ইসলামী নিজস্ব একটি সনদের খসড়া তৈরি করছে এবং সেটি খুব শিগগিরই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জমা দেবে। দলটির অবস্থান হলো—সংলাপে যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর বাস্তবায়নে একটি আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে। তা না হলে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আবারও অনিশ্চয়তার দিকে চলে যেতে পারে।

এ প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামী কমিশনকে জানিয়েছে, তারা সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো গঠন চায়, যা হয় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে, নয়তো জনগণের অংশগ্রহণে গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হবে। 

তাহের বলেন, ‘আমরা যে কোনো একটি পদ্ধতিতে এই কাঠামোকে আইনগত বৈধতা দিতে চাই।’ সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার গঠন নিয়েও বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে বরে জানান তিনি। 

তাহের জানান, একটি পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব হয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি থাকবেন। তারা ১২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্য থেকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান নির্বাচন করবেন।

তিনি আরও বলেন, যদি বাছাই কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ‘র‌্যাংক চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে উপরে উল্লিখিত পাঁচজন সদস্যের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের একজন করে বিচারপতি যুক্ত হবেন, যাতে করে মোট সাতজন ভোটার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

তাহের বলেন, বিচারপতি অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি আরও নিরপেক্ষ হবে এবং রাজনৈতিক হর্স ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি কমবে। তিনি আরও জানান, বিএনপি এই পদ্ধতিতে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে এবং তারা চায়, মতবিরোধ হলে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক। তবে জামায়াতসহ অধিকাংশ দল মনে করে, সংসদে পাঠানো হলে সিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়িত হবে না।

জামায়াতের এই নায়েবে আমিরের মতে, এই মুহূর্তে সংসদে মাত্র পাঁচ থেকে ছয়টি দল রয়েছে, অথচ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ৩০টির বেশি দল অংশ নিচ্ছে। তাই তিনি মনে করেন, এখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়া প্রয়োজন।

এর আগে খসড়া গ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন বলেন, আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়েই আলোচনা হয়নি, অথচ হঠাৎ খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জানান, নির্বাচনের আগে আইনগত নিশ্চয়তা না থাকলে এনসিপি জুলাই সনদ মেনে নেবে না।