Image description

জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে পুঁজি করে কয়েকটি রাজনৈতিক দল সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, যে দল প্রতিষ্ঠিত নয়, তাদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার এক দলকে কোলে আরেক দলকে কাঁধে রেখেছে। 

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদের স্মরণে রাজধানীতে দোয়া ও মৌন মিছিলপূর্ব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এ কর্মসূচির আয়োজন করে। 

দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদদের বিক্রি করে কেউ কেউ রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। শহীদদের নিয়ে আফসোস হয়। কারণ, শহীদদের নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে, রাজনৈতিক ব্যবসা চলছে। তারা বেঁচে থাকলে লজ্জা পেতেন। তারা যে কারণে জীবন দিয়েছিলেন, যে কারণে গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন, সেই কারণগুলো আজকে হচ্ছে না।

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপির প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করবেন না। নির্বাচন না দিলে ভাবব, আপনারা দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছেন। একটি পক্ষকে সুযোগ দিয়ে অন্যদের দাবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করবেন না। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করছি। দ্রুত নির্বাচন দিন, দেশে শান্তি ফিরবে। 

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, একজন তথাকথিত পির সাহেব বলেছেন, ‘জামায়াতের ছোঁয়া যেখানে লাগবে সেই জায়গায় পচে যাবে’। তিনি (পির) আজকে জামায়াতের কোলে উঠে বসেছেন।  জামায়াত এক সময় বিএনপির কাঁধে পাড়া দিয়ে মন্ত্রী হয়েছে, এক সময় আওয়ামী লীগের কাঁধে পাড়া দিয়ে মন্ত্রী হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তারা দালালি করেছে, তাদের নিজেদের বিক্রি করছে।

বিএনপি নিয়ে কটাক্ষকারীদের উদ্দেশে দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিএনপিকে অনেকে আওয়ামী লীগের কাতারে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। দয়া করে জিহ্বায় একটু লাগাম দিন। তাতে আমাদের সবার ভালো হবে। এমন বাজে কথা বলবেন না। বিএনপি ঝগড়ার দল নয়, বিএনপি গণতন্ত্রকামী দল, জনগণের সঙ্গে নিয়ে লড়াই করে।

মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে আন্দোলন করেছে। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে কেউ কেউ। কিন্তু বিএনপির একজন নেতাকর্মীও জীবিত থাকলে তারা কখনো সফল হবে না। আমাদের নেতাকর্মীরা জেল খাটতে অভ্যস্ত, রাস্তায় আন্দোলন করতে অভ্যস্ত। জীবন ও যৌবনের অর্ধেক সময় রাজপথ ও জেলখানায় কাটিয়েছি। পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করবে না। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল নয়। বিএনপির একজন জীবিত থাকতেও তাদেরকে মাইনাস করে ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ পূরণ হবে না।

জুলাই গণঅভুত্থানে বিএনপি এবং ছাত্রদলের প্রায় ৪২২ জন শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ওই ঘটনাগুলোকে নিয়ে বিশেষ কয়েকটি দল রাজনীতি করছে এবং তাদের বিক্রি করে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করছে।’ 

শহীদরা কোনো একক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুরে থেকে নয়াপল্টনে জড়ো হয় দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের জন্য দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করে দলটি। 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনা করেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বিকাল ৫টায় মৌন মিছিল শুরু হয়। এতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। মিছিলটি কাকরাইল, মালিবাগ ও মৌচাক হয়ে আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।