Image description

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোনোভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হোক সেটা আমরা চাই না। এবিষয়ে কোনো জাতীয় ঐকমত্যও হয়নি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দেখেছি, যেখানে বলা আছে ৪ মাস।

আমাদের দলীয় অবস্থান হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্থায়িত্ব তিন মাসের বেশি হওয়া উচিত না এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন তাদের এখতিয়ারে থাকাই উচিত না।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তার নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান বিষয়ভিত্তিক সংলাপে অংশ নেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত হবে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে, এমন বিধান রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। কিন্তু দলীয় অবস্থান থেকে আমরা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ব্যাপারে আস্থাভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনসহ জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন। এর বাইরে সব বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রে যদি কোনো কারণে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়, তবে জাতীয় সংসদে অবশ্যই এ বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু সরকারি দল নয়, সমস্ত দলকে নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেই জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি ছাড়া অন্য দুই বিষয়ে প্রায় সবাই-ই একমত হয়েছেন। কেউ কেউ বিস্তারিত আলাপের জন্য সময় চেয়েছেন। এই তিনটা বিষয়ে যদি একমত হওয়া যায়, তবে আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টা আলাদাভাবে উপস্থাপন করব এবং আমাদের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে এটা থাকবে। 

সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, সংসদের সব স্থায়ী কমিটির প্রধান বিরোধী দল থেকে দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি একমত নয়। কয়েকটি কমিটিতে প্রধান বিরোধী দল থেকে করা যেতে পারে, তবে সব স্থায়ী কমিটির প্রধান বিরোধী দল থেকে দেওয়াকে তারা বাস্তবসম্মত প্রস্তাব মনে করে না।

পরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) আয়োজনে ‘গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য।

সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন জাতীয়ভাবে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। নির্বাচন সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়, বিচার স্বাধীনভাবে চলবে। এই সরকারের পরে যারা সরকারে আসবে, তাদের সেটা টেনে নিয়ে যেতে হবে।’

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সেগুলোর বিচার করতে গেলে অনেক সময় লাগবে এবং সেই সময়ে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে বিচারের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবে। সুতরাং বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক সরাসরি আছে, সেটা বলা ঠিক হবে না। আর বিচারের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়া অবিচারের শামিল। কারণ, বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়া আমরা সবাই জানি এবং সুবিচার করতে হলে সময় দিতে হয়।’

দেশে এবং বিদেশে বসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা সৃষ্টির অনেক চেষ্টা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা, ‘এ দেশে কেউ অপরাধ করে পার পাবেন না। বর্তমান অস্থির পরিস্থিতি বন্ধের উপায় হলো, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠিত করা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেটি যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে ততই জাতির জন্য মঙ্গল।’ যৌক্তিকভাবে সবকিছু বিবেচনা করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর’রের সভাপতিত্বে ও দলটির সহসভাপতি ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ প্রমুখ।