Image description

আর একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। এ কারণে রাজধানীজুড়ে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে বইছে জমজমাট কেনাবেচার ধারা। সরকারি অফিসে ছুটি শুরুর পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাটগুলোতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। হাটে হাটে মানুষের ভিড় ও ব্যাপারীদের হাঁকডাক মিলিয়ে ঈদের আগাম আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে নগরজুড়ে।

রাজধানীর গাবতলী, আমিনবাজার, কামরাঙ্গীরচর, শনিরআখড়া, পুরাতন বিমানবন্দর মাঠসহ বিভিন্ন অস্থায়ী ও স্থায়ী হাটগুলোতে দেখা গেছে, কেউ কেউ সারা রাত ঘুরে পছন্দসই গরু কিনে ভোরবেলা বাড়ি ফিরছেন। আবার অনেকেই হাটে হাজির হয়েছেন সকাল হতেই, নিজের সামর্থ্য ও ইচ্ছেমতো পশু খুঁজে বের করছেন। দরদাম মিললে সঙ্গে সঙ্গে সেরে নিচ্ছেন ক্রয়-বিক্রয়। কেউ কেউ আবার পরিবার নিয়ে এসেছেন হাটে, বিশেষ করে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে গরু কেনার এই মুহূর্তটা উপভোগ করছেন অনেকেই।

চলমান তাপপ্রবাহ ও ভ্যাপসা গরমের মধ্যেও হাটে ক্রেতাদের উপস্থিতি কমেনি। গাবতলী হাটে আসা এক ক্রেতা রাকিবুল হাসান বলেন, “গরম অনেক, কিন্তু ঈদের পশু কিনতেই হবে। সকালে এসে হাট ঘুরে মাঝারি একটা গরু পছন্দ করেছি, এখন দরদাম চলছে।” হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে কোনো ছাউনি বা ছায়ার ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে ক্রেতাদের।

বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারি ও ছোট গরুর দিকেই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। এসব গরুতে কোরবানির খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় মধ্যবিত্তের কাছে এগুলোই বেশি গ্রহণযোগ্য। ফলে হাটে এই গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে দ্রুতই। তবে বড় গরুতে দরদামে বনিবনা না হওয়ায় সেগুলোর প্রতি আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম।

গাবতলী হাটের একজন বিক্রেতা আবদুল মালেক বলেন, “মাঝারি সাইজের গরুর দামও তুলনামূলকভাবে বেশি। কিন্তু তারপরও এগুলো বিক্রি হচ্ছে ভালো। বড় গরুর ক্রেতা কম। যারা দাম করতে আসছেন, তারা কম দামে কিনে নিতে চাইছেন, তাই বিক্রি হচ্ছে না।”

হাটে উপস্থিত অধিকাংশ ক্রেতা বলছেন, পশুর দাম এখনো তাদের নাগালের বাইরে। ধানমণ্ডি থেকে আসা ক্রেতা আসরাফ উদ্দিন বলেন, “এবার হাটে গরুর দাম বেশি। মাঝারি ও ছোট গরুর দামও আশানুরূপ কমেনি। যারা ঈদের এক দিন আগে কেনেন, তারা হয়তো কিছুটা কম দামে পাবেন।”

তবে ব্যাপারীরা বলছেন, পশুর খাদ্যদ্রব্যের দাম, পরিবহন খরচ ও অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক।

রাজধানীর কিছু হাটে এবার দেখা মিলছে উট ও দুম্বারও। বনানী ও পুরাতন বিমানবন্দর হাটে একটি করে উট আনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব পশুতে কৌতূহল অনেক, কিন্তু ক্রেতা তুলনামূলকভাবে কম।

ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, কোরবানির হাটে এখনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু আসছে। মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে প্রতিদিনই আসছে পশু। বিক্রেতাদের প্রত্যাশা, ঈদের আগে শেষ দুই দিনে বেচাকেনা আরও বেড়ে যাবে।

হাট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, “হাটগুলোতে নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও দরদামের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি।”

হাট কেন্দ্রিক যানবাহনের চাপে আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। হাটের আশপাশে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ পথচারী ও যাত্রীদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, যানজট কমাতে হাটসংলগ্ন এলাকায় অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলো এখন ক্রেতা ও বিক্রেতার মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে পশু কেনাবেচার গতি। তবে পশুর দাম কিছুটা কমলেই ক্রেতারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।