Image description

একজন মা যখন তার সন্তানকে দেখেন, সেখানে থাকে নিখাদ ভালোবাসা, নির্ভেজাল মমতা, গভীর দায়বদ্ধতা এবং সীমাহীন ক্ষমা। সন্তানের প্রতিটি হাসি, কান্না, সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা, সবকিছুতেই মায়ের চোখে দেখা যায় এক অনন্য আবেগের দীপ্তি। ঠিক এই জায়গা থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তিনি বাংলাদেশকে গড়তে চান মায়ের চোখে দেখা সন্তানের মতো করে। এই কথা শুধু একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং এটি এক গভীর নৈতিক দর্শনের প্রতিফলন।

এটা এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে সব নাগরিক মায়ের সন্তানের মতো সমান অধিকার পাবে। এখানে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা হবে না, কাউকে অবহেলা করা হবে না, কাউকে অবিচারে পিষ্ট হতে হবে না। এটি এমন এক স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে, যেখানে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের প্রতি রাখবে নিরন্তর যত্ন, স্নেহ ও দায়িত্বশীলতা।

তারেক রহমানের এই দৃষ্টিভঙ্গি রাজনৈতিক ভাষায় বলতে গেলে ‘জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের’ আধুনিক রূপায়ণ। কিন্তু তার এই কল্পনার গভীরে রয়েছে মানবিকতা, রয়েছে অন্তরের টান। তিনি বাংলাদেশকে দেখতে চান এমন এক মমতাময় ভরা রাষ্ট্র হিসেবে, যেখানে ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না কানে পৌঁছাবে রাষ্ট্রের শীর্ষপদ পর্যন্ত, বেকার যুবকের দৃষ্টিতে থাকবে আশা, বৃদ্ধের মুখে থাকবে সন্তুষ্টির হাসি। এমন একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন শুধুই রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নয়; বরং এটি একটি নৈতিক দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। 

যে বাংলাদেশে রাজনীতি মানে হবে জনগণের সেবা, রাজনীতি মানে হবে না ক্ষমতার খেলা কিংবা প্রতিহিংসার চর্চা। যেই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে ন্যায়ের এক মজবুত ভিত্তির উপর। এই বাংলাদেশে শিশুদের চোখে থাকবে স্বপ্ন, কিশোরদের মনে থাকবে সাহস, আর তরুণদের হাতে থাকবে সম্ভাবনার চাবিকাঠি। ‘মায়ের চোখে বাংলাদেশ’ কেবলমাত্র আবেগের গল্প নয়, এটি ভবিষ্যতের একটি নকশা, যেখানে উন্নয়ন আর মানবিকতা একে অপরের পরিপূরক হবে। এখানে শিক্ষা হবে প্রাপ্য অধিকার, চিকিৎসা হবে সহজলভ্য এবং নিরাপত্তা হবে অবিচ্ছেদ্য দায়িত্ব।

যে মা তার সন্তানের জন্য খাবার তুলে দিতে নিজের ভাগ্য বিসর্জন দেন, সেই মায়ের মতো একটি রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের প্রয়োজন আগে বিবেচনায় নেয়, তবে কোনো নাগরিক আর অবহেলিত থাকবে না। তারেক রহমানের স্বপ্ন সেই রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপরেখা দেয়, যেখানে ক্ষমতা নয়, সেবা হবে শাসনের মূলমন্ত্র।

আজ আমাদের জাতীয় জীবনে যে সংকট, বিভাজন ও অনিশ্চয়তা, তা কাটিয়ে ওঠার একমাত্র উপায় হলো একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহানুভূতিশীল ও অন্তর থেকে দায়বদ্ধ রাষ্ট্র গড়ে তোলা। তারেক রহমানের এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, রাজনীতি মানে কেবল প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা নয়, বরং জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করাই তার প্রকৃত উদ্দেশ্য। একজন মা যেমন প্রতিটি সন্তানের জন্য আলাদা করে ভাবেন, ঠিক তেমনি একটি রাষ্ট্রকেও দরকার প্রতিটি নাগরিকের সম্ভাবনা বুঝে পরিকল্পনা সাজানোর। কেউ শহরে, কেউ গ্রামে; কেউ ধনী, কেউ গরিব, কিন্তু রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে সবাই যেন একরকম আদরের, একরকম গুরুত্বপূর্ণ। এটাই হতে পারে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি।

এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথচলার দিশাই নয়, বরং এটি হতে পারে গোটা জাতির সামনে একটি আদর্শিক মানদণ্ড। কারণ, যেদিন রাষ্ট্র তার নাগরিকদের দিকে তাকাবে এক জননীসুলভ স্নেহভরে, সেদিনই সম্ভব হবে একটি সহনশীল, ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক এবং উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ গড়া।

একটি মায়ের চোখে যেমন সন্তানদের জন্য নিরাপদ ও পরিপূর্ণ পরিবেশ তৈরির আন্তরিক ইচ্ছা থাকে, তেমনি একটি সুশাসনভিত্তিক রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যেখানে প্রশাসন হবে জবাবদিহিমূলক, বিচারব্যবস্থা হবে স্বাধীন ও দ্রুতগামী, আর সব প্রতিষ্ঠান হবে জনগণের কল্যাণে নিবেদিত। আইন থাকবে রক্ষার জন্য, ভয় দেখানোর জন্য নয়; এবং প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার মধ্যেই রাষ্ট্রের কর্তব্যবোধ প্রতিফলিত হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি স্তরে থাকা চাই মানুষের প্রতি সহানুভূতি, দায়িত্ববোধ এবং আন্তরিকতা। 

অর্থনীতি হতে হবে সমতা-ভিত্তিক, যেখানে কেবল ধনীর ধন বৃদ্ধি পাবে না; বরং দরিদ্র মানুষের জীবনমানও উন্নত হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য না রেখে সমগ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিত করাই হবে রাষ্ট্রকাঠামোর মূল দৃষ্টিভঙ্গি। একটি মা যেমন নিজের সব সন্তানের প্রতি সমান মনোযোগ দেন, ঠিক তেমনি রাষ্ট্রকেও হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আর সংখ্যালঘুর ভেদ থাকবে না; শহর আর গ্রামের বৈষম্য থাকবে না; পুরুষ, নারী ও তৃতীয় লিঙ্গ, সকলেই রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা সমানভাবে ভোগ করবে। 

এটি কেবল সামাজিক ন্যায়ের কথা নয়, বরং একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠনের মৌলিক ভিত্তি। আমরা সবাই সেই বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশকে ভালোবাসা যায় নিঃশর্তভাবে, যেমন ভালোবাসে মা তার সন্তানকে। বাংলাদেশ যদি সত্যিই হয়ে ওঠে একজন মায়ের চোখে দেখা সন্তানের মতো, তাহলে আর কোনো চোখে জল জমবে না, আর কোনো স্বপ্ন ছিন্নভিন্ন হবে না। এই বাংলাদেশই হোক আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়া সেরা উপহার। 

বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলাদেশে অনেক মা তার প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। তারেক রহমানের মাও তার প্রিয় এক সন্তানকে হারান। কিন্তু তারেক রহমান তার ভাইকে দেখতে যেতে পারেননি। রাষ্ট্র তাদের উপর এমন আচরণ করেছে যে কারণে তার ভাইকে হারাতে হয়েছে। বহু মায়ের সন্তান তার অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে বুলেটের আঘাতে বিদ্ধ হয়েছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের এমন নির্মম নির্যাতনের ফলে এভাবে বহু মা হারিয়েছেন তার সন্তানকে। 

রাষ্ট্র যদি প্রকৃত মায়ের মতো আচরণ করতো তাহলে কাউকে এমন জীবন দিতে হতো না। তারেক রহমান এখানে শুধু ব্যক্তিগত মায়ের চোখের কথা নয়, বরং সেই চোখে গণতন্ত্রের স্বপ্ন, মানবতার আশা এবং নিঃশর্ত ভালোবাসা প্রতিফলনের কথা বলতে চেয়েছেন। মায়ের মতো রাষ্ট্র যদি তার সন্তানকে দেখত, তাহলে কোনো সন্তানই যেন নিঃশব্দ ও নির্যাতনে আক্রান্ত হয়ে মরতে হতো না। 

তারেক রহমানের শক্তিশালী এই বাণীতে মায়ের মতো এক স্নেহময় ও দায়বদ্ধ রাষ্ট্রের চিত্র ফুটে ওঠে, যে রাষ্ট্র তার সন্তানদের নির্যাতন ছাড়া উন্নতির সুযোগ দেবে, ক্ষমতা নয়, কল্যাণই তার লক্ষ্য হবে এবং যার বুকে থাকবে না হিংসা, থাকবে শুধুই ন্যায় ও মানবিকতা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট, লন্ডন, যুক্তরাজ্য