Image description

একটি কথা প্রচলিত আছে যে অধিকার কেউ কাউকে দিতে চায় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়। রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে এটি আরও জটিল আকার ধারণ করে। বিভিন্ন ধরনের বঞ্চনা রাষ্ট্রে থাকে। বঞ্চিত গোষ্ঠী বা ব্যক্তি তাদের অধিকার আদায়ে দুই ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকেন। একটি আইনগত প্রক্রিয়া যেটা আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। 

অন্যটি হলো রাজপথে আন্দোলন করে চাপে ফেলে অধিকার আদায় করে নেয়া। তবে রাজপথের আন্দোলনের মধ্যে কিছু নিয়মতান্ত্রিক বিষয় থাকে। খেয়াল খুশি মতো আন্দোলন করে দাবি আদায় মোটেও কাম্য নয়। বিগত ১৭ বছরে রাষ্ট্রের বহু মানুষ বিভিন্ন ধরনের বঞ্চনার শিকার হয়ে আছে। পট পরিবর্তনে সেসব বঞ্চনাগুলো যেন বিস্ফোরণে রূপ নিচ্ছে। প্রফেসর ইউনূস সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর তারা একদিনের জন্যও রাষ্ট্র স্বস্তিতে চালাতে পারছে না।

এটা কি তাদের ব্যর্থতা, নাকি আমাদের বাড়াবাড়ি, নাকি ভয়ঙ্কর কোনো রাজনৈতিক উসকানি? ফ্যাসিজমের অবসানে সবাই একটি সুন্দর রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিল। নতুনভাবে রাষ্ট্র সংস্কার করে তারপর একটি সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার দায়িত্ব নিবে এটাইতো সবার চাওয়া ছিল। কিন্তু কোথায় ঝামেলা? কার উসকানিতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে? রাজনৈতিক মেরুকরণ থাকতেই পারে। কিন্তু রাষ্ট্রকে, সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা কি কোনো সুফল বয়ে আনবে? ছাত্রসমাজ বর্তমানে মনে হচ্ছে একটি টার্মকার্ডে পরিণত হয়েছে। তারা নিজস্ব স্বকীয়তা যেন ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। 

২০২৪ সালের আগস্ট মাসের শুরুর দিকে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়। দশ মাস এই সরকারের বয়স। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় তিনশো আন্দোলন মোকাবিলা করেছে এই সরকার। পরিসংখ্যান মতে প্রায় প্রতিদিনই সরকারকে যৌক্তিক / অযৌক্তিক আন্দোলন মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এটাতো গেল সরকারের উপর চাপ। এই আন্দোলনে জন দুর্ভোগের হিসাব কি কেউ করেছে? রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বিগত দশ মাস বিভিন্ন জাতের আন্দোলন চলছে। 

প্রচণ্ড জ্যামে স্থবির হয়ে পড়ছে রাজধানীবাসীর জীবন। কার স্বার্থে এগুলো করা হচ্ছে? রাষ্ট্রের সব সমস্যার সমাধান কি এই সরকারকেই করতে হবে? যদি তাই করতে হয় তবেতো এই সরকারকে লম্বা সময় দিতে হবে। সেটা দেয়ার জন্য কি রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুত? মোটেও না। সম্ভব হলে তারা কালকেই নির্বাচন চায়। মনে হচ্ছে সকল সমস্যার সমাধানের মহৌষধ হচ্ছে নির্বাচন। আসলে কি তাই! প্রতিটি আন্দোলনকে সরকার খুব ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করছে। 

আন্দোলনকারীদের উপর ন্যক্কারজনক কোনো পুলিশি অ্যাকশন নেই। অনেকের দাবি দাওয়া সরকার ইতোমধ্যে পূরণও করেছে। কিন্তু এত স্বল্প সময়ে কি সরকারের পক্ষে সকল দাবি পূরণ করা সম্ভব? মোটেও না। ধরে নিলাম আগামী জুনের ( ২০২৬) মধ্যে নির্বাচন হবে। তাহলে আগামী কয়েকটি মাস কি আমরা ধৈর্য ধরতে পারছি না? গত ১৭ বছর কোথায় ছিল এসব আন্দোলনকারীরা? তারা কেন হাসিনা সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় করে নিতে পারেনি? ধরে নিলাম দাবিগুলো যৌক্তিক। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নের জন্যতো সময় দরকার, অর্থ দরকার, জনবল দরকার। 

ইউনূস সরকার ছাত্র-জনতার সমর্থনে রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছে। কিন্তু সব গোষ্ঠী বা পক্ষ কি তার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়েছে? না, সেটা দেয়নি। এই সরকারের প্রতি অনেক পক্ষ বা গোষ্ঠীর শোকুনি নজর রয়েছে। পর্দার আড়ালে তারা এই সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চাচ্ছে। কেননা এই সরকারকে তারা ব্যর্থ করে দিতে পারলে তাদের নগ্ন স্বার্থ হাসিল হবে। সাধারণ জনগণ কি চায়? একটু স্বস্তি আর তিনবেলা খাবার। বাজার নিয়ন্ত্রণে এই সরকার ম্যাজিক দেখিয়েছে। রোজার সময় দারুণ নিয়ন্ত্রণে ছিল বাজার। এখনো দু-একটি পণ্য বাদে স্বস্তিতে আছে বাজার পরিস্থিতি। ১৫-২০ টাকা কেজি আলু। যে আলু ফ্যাসিস্ট আমলে ৮০ টাকা কেজি খেতে হয়েছে। 

১৬০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি যেটা ২৩০ টাকা কেজি ছিল ফ্যাসিস্ট আমলে। সবজির দাম এখনো বেশ সহনশীল। আর এটাই মনে হয় অনেকের গাত্রদাহ! মানুষ কেন এত স্বস্তিতে থাকবে? জনগণ স্বস্তিতে থাকলেতো ইউনূস সরকারের প্রতি তাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। আর এই ভালোবাসাতো কারও কারও গা জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। ইউনূস সরকার যেসব কাজ খুব নিখুঁতভাবে করছে সেটা বলার সুযোগ নেই। তবে মোটামুটি স্বস্তিতে রেখেছে জনগণকে। 

তাহলে জনগণ হিসাবে আমাদেরও দায় আছে সরকারকে স্বস্তিতে কাজ করতে দেয়া। কিছু গোষ্ঠী রাষ্ট্রে অস্থিরতা তৈরি করে রাখতে চাইবে। এক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। ফ্যাসিজমের বিদায়ের পর পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সব স্তরে একটা নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে সরকার সেটা মোকাবিলা করে একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে এনেছে। সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে হাত দিয়েছে। অত্যন্ত জটিল এবং সাহসী একটি কাজ হলো রাষ্ট্র সংস্কার। রাষ্ট্র সংস্কার করতে গেলে অনেকের অনেক স্বার্থ ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলে যাবে। দুর্নীতি কমে আসবে। 

এটা কি সবার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব? যারা যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্রকে অজগরের মতো একটু একটু করে গ্রাস করছে তাদের কাছে এই সংস্কারতো বড় যন্ত্রণার, বড় বিষাদের! সরকার যাতে স্বস্তিতে সংস্কার করতে না পারে সেজন্য কিছু কিছু গোষ্ঠীতো মরিয়া হয়ে উঠেছে। এটা জনগণকে বুঝতে হবে। এই সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পারলে কার স্বার্থ হাসিল হবে সেটা জনগণকে বুঝতে হবে। যদি তারা বুঝতে ব্যর্থ হয় তবে সেটার মাশুল তাদেরকে আবারও দিতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কার বলতে শুধু নির্বাচনী সংস্কারকে বুঝায় না। 

রাষ্ট্রীয় সংস্কার বলতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্কারকে বুঝায়। এই সংস্কারগুলো করার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। একটি বিশেষ দাবি আন্দোলন করে আদায়ের চেয়ে একটি সার্বজনীন সংস্কার অতি বেশি জরুরি। কিন্তু আমাদেরতো তর সইছে না। আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থকে বৃহৎ স্বার্থের উপর স্থান দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছি। কবে আমরা সত্যিকার অর্থে বৃহৎ স্বার্থটি বুঝতে পারবো? সংস্কার নিয়ে কত লোকের মাথাব্যথা আছে? কেউ কি জরিপ করেছে? না, জরিপ হয়নি। তবে অভ্যুত্থান পরবর্তী দেয়াল লিখন ও দাবি দাওয়া থেকে বুঝা যায় গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারা থেকে মানুষ বের হতে চাচ্ছে। একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চায় সাধারণ জনগণ।

শাহবাগ, প্রেসক্লাব যেন দাবি আদায়ের তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। মন চাইলো আর কয়েকজনকে সাথে নিয়ে সেখানে জড়ো হতে শুরু করলো। এ যেন মগের মল্লুক। মামাবাড়ির আবদার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাক-স্বাধীনতা থাকবে, দাবি আদায়ে সরব হতে পারবে। তাই বলে যা খুশি তাই করা যায়? যদি প্রশ্ন করি গণহত্যায় যারা নিহত ও আহত হয়েছে তাদের দ্রুত বিচারের দাবিতে কদিন আন্দোলন করেছেন? উত্তরে যা আসবে সেটা খুবই নগণ্য। ৩৬০টি জাত-বেজাতের আন্দোলন হলো। এর মধ্যে দ্রুত বিচারের দাবিতে কোনো শক্ত আন্দোলন চোখে পড়েনি। 

কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানানো, পদ-পদবি, প্রমোশন, বেতন বৃদ্ধি, জাতীয়করণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে হল নির্মাণ, ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা আন্দোলন হয়েছে। চরম জনদুর্ভোগ হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। রাষ্ট্রের সংস্কার নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নিয়ে কদিন আন্দোলন করেছেন? প্রচুর মানুষ বেকার। বেকারত্ব নিয়ে কয়টি আন্দোলন করেছেন? বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা দুর্নীতি। সেটার বিরুদ্ধে কয়টি আন্দোলন হয়েছে? একটিও হয়নি। কি কি সংস্কার প্রস্তাব ইতোমধ্যে করা হয়েছে এবং কোন কোন জায়গায় রাজনৈতিক দল ভিন্ন মত দিয়েছে সেটার খবর কজন রাখেন? অথচ রাষ্ট্রের সংস্কার রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য অপরিহার্য। 

ঠুনকো দাবি দাওয়া নিয়ে কেন রাজপথ গরম করা হচ্ছে? কার স্বার্থে করা হচ্ছে? সুন্দরভাবে রাষ্ট্র চালোনার জন্য সরকারকে সহায়তা করতে হয়। কারও বিশেষ স্বার্থ হাসিলের জন্যতো রাষ্ট্র বসে থাকতে পারে না। রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণ সরকারের প্রধানতম দায়িত্ব। ফ্যাসিস্ট আমলে জনগণ শুধু একটি সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণমূলক ভোটের চিন্তা করতো পাঁচ বছর পর পর। যেই পট পরিবর্তন হলো সেই থলের ভেতরে থাকা সব দাবি বের হতে লাগলো। অর্থশাস্ত্রে একটি কথা আছে, ব্যক্তিকে আয় বুঝে ব্যয় করতে হয় আর সরকারকে ব্যয় বুঝে আয় করতে হয়। 

রাষ্ট্রের ব্যয় প্রচুর বেড়ে গেছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার ধ্বংস ও দুর্নীতির কারণে। এই ব্যয় সরকারকে আয়ের মাধ্যমে পূরণ করতে হচ্ছে। সরকারের আপ্রাণ চেষ্টায় রেমিট্যান্স বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত কিছুটা সম্ভব হয়েছে আর বাকিটা চেষ্টায় আছে। বিগত সরকার প্রচুর ঋণ রেখে গিয়েছিল সেগুলো সরকার অনেকটা পূরণ করেছে এবং বাকিটা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট আমলে যেসব অত্যাচার,  নির্যাতন, জুলুম হয়েছে তার কিছুই এখন নেই বললেই চলে। কোনো রাষ্ট্রীয় জুলুম নেই এখন। 

তবুও কেন এই সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা! চট্টগ্রাম পোর্টকে গুরুত্ব দিয়ে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য। বেকারত্ব দূর করার জন্য উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে। কেন সরকারের ভালো দিকগুলো আমরা প্রশংসা করতে পারছি না! প্রতিটি সরকারের সমালোচনা থাকবে। বিগত সরকার সমালোচনা সহ্য করতে পারতো না। ইউনূস সরকারকে তো ধুয়ে দেয়া হচ্ছে সমালোচনা করে। কই তিনিতো চুপ থাকেন। সব সমালোচনা শুনেও নীরব থাকেন।  

সরকার তার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। সব ক্ষেত্রে যে সফল হচ্ছে তা বলা যায় না। তবে রাষ্ট্রের বেসিক কিছু পরিবর্তন নিয়ে সরকার কাজ করছে। একমাসের মধ্যে সরকার জুলাই চার্টার প্রকাশ করবে। কি আছে তাতে সেটা সবাই জানতে পারবো। মানুষ এখন স্বাধাীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারছে। দাবি আদায়ে আন্দোলন হোক তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু সরকারকেতো কাজ করতে দিতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ নেই। কয়েকজন উপদেষ্টা দিয়ে চলছে কাজ। একেকজন উপদেষ্টার হাতে কয়েকটি করে মন্ত্রণালয় রয়েছে। তাদের কাজের পরিধি ও চাপ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।

বিগত সরকারতো কারও কথা শুনতে চাইতো না নিজ দলের ছাড়া। এখনতো সরকার ও তার প্রতিনিধি সরাসরি আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে। সমস্যা শোনার চেষ্টা করে। তবুও পানির বোতল তাদের মাথায় ছুড়ে মারতে হবে! এত বর্বর হয়ে গেলাম আমরা! সরকারতো বলেনি যে দাবি মানবে না। তাহলে উপদেষ্টাকে শারীরিক লাঞ্ছিত করা হলো কেন? উসকানিটা কোথা থেকে আসছে। এ রাষ্ট্র আমাদের। এটাকে ব্যর্থ হতে দেয়া যায় না। সরকারকে সংস্কার, বিচার নিশ্চিতকরণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য সময় দিতে হবে। 

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করলে যেই লাউ সেই কদু হবে। আবার স্বৈরাচার ফিরে আসতে পারে। তাহলে কেন আমরা সরকারকে একটু স্বস্তিতে কাজ করতে দিচ্ছি না? সরকারকে কি তবে কেউ কেউ দুর্বল ভাবছেন? যদি ভেবে থাকেন তবে সেটা বড় ভুল। আমরা কেন ভুলে যাচ্ছি যে আমাদের একজন নোবেল লরিয়েট ইউনূস আছে। যার ব্যক্তি ইমেজ আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এই সৃষ্টিশীল মানুষটিকে কেন আমরা কাজ করতে দিচ্ছি না। 

ইউনূস সরকার রাতারাতি সব করে দিবে কেন এটা ভাবছি। রাজনৈতিক দলগুলো কি করছে? কতটুকু তারা সরকারকে সহায়তা করছে? একটি দল চারটি অক্ষরে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর সেটা হলো নির্বাচন। মনে হচ্ছে দেশে নির্বাচন ছাড়া আর কোনো সংকট নেই। এত বছরেও বড় দলটিতে কেন শুদ্ধতা আসছে না? কবে হবে উপলব্ধি? যেটা কোনো ইস্যু নয় সেটাকে ইস্যু করা হচ্ছে কেন? জাতীয় সংগীত পরিবর্তন নিয়ে কেউ কেউ উন্মাদ হয়ে গেছে। কেন এত উন্মাদনা? আমরা আসলে কি চাই? সেটা আগে নির্ধারণ করতে হবে। 

প্রতিটি দিন সরকারকে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে রাজপথের আন্দোলন দিয়ে। তাহলে তারা কাজ করবে কখন? তারা ইতিবাচক চিন্তা করবে কখন? স্থিতিশীলতা ছাড়া একটি সরকার কীভাবে আগাবে। আমরা বড্ড আবেগী জাতি। বুঝে না বুঝে বড় আবেগী হয়ে পড়ি আমরা। যাহোক এমন অবস্থা চলতে পারে না। কিছু হলেই যমুনায় দল বেঁধে আসা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেশের সুশীল সমাজ কি করছে? তারা কেন বড় রোল নিতে পারছে না। শিক্ষার্থীদেরকে বুঝাতে হবে আমাদের। 

দাবি আদায়ে রাজপথে নামতে বাধা নেই। কিন্তু কোনোভাবেই সেটা যেন জনদুর্ভোগ তৈরি না করে। সরকারকেও কিছুটা কঠোর হতে হবে। কি কি সংস্কার সরকার করছে সেটা জনগণকে সুনির্দিষ্টভাবে অবগত করতে হবে। কোন কিছুই ধোঁয়াশায় রাখা যাবে না। সংস্কারের নামে অতিমাত্রায় সময়ক্ষেপণও যৌক্তিক হবে না। নির্বাচনের দিকে সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ দিয়ে আগাতে হবে। 

সরকার আগামী বছরের জুন পর্যন্ত কি কি করতে চায় সেটা পরিষ্কার করে বলতে হবে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ক্রমশই প্রকট হয়ে উঠছে। নানামুখী চাপে পড়েছে ইউনূস সরকার। জনগণকে নিয়েই সেই চাপ সামাল দিতে হবে সরকারকে। একটি বড় রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই চাপও সরকার কতটুকু সামলাতে পারে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। 

নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত এই সরকারকে একটু স্বস্তিতে কাজ করতে দেয়া আমাদের সবার কর্তব্য বলে মনে করি। করিডর নিয়েও যেসব সমালোচনা হচ্ছে সেটাকেও আমলে নিয়ে সরকারকে জনমুখী কাজ উপহার দিতে হবে। এই সরকারের নিকট জনগণের প্রত্যাশা অনেক। সরকার কি তা উপলব্ধি করে?

লেখক: কবি ও কলামিস্ট