Image description

আধুনিক সভ্যতা বিজ্ঞানের চূড়ান্ত উৎকর্ষে পৌঁছালেও, বিশ্বমানবতা আজ এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে বাড়িয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়, নৈতিক অবক্ষয়, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। বাস্তবতা হচ্ছে, কিছু দেশ কিছু মানুষ বিলাসিতায় ডুবে আছে, আর অন্যদিকে, কোটি কোটি মানুষ টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত।

যুদ্ধ, অভিবাসন সংকট, রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব, অর্থনৈতিক শোষণ, বৈষম্য সংকট সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ দুঃসময়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে সভ্যতা। ধনী দেশগুলোর সম্পদের পাহাড় ক্রমশ উঁচু হচ্ছে, অথচ অনাহারে ধুঁকছে হাজার হাজার শিশু, ভ‚মিহীন হয়ে ঘুরছে লাখো শরণার্থী। বিশ্বায়নের সুফল যেখানে কিছু নির্দিষ্ট শক্তির হাতে কেন্দ্রীভ‚ত, সেখানে বিপরীতে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোর মানুষ নিরাপত্তাহীন, উদ্বাস্তু আর প্রতিনিয়ত নিপীড়িত। 

এটাই কি সভ্যতার চূড়ান্ত রূপ? নাকি পরিবর্তনের আশায় এখনও কিছু করা সম্ভব? ইতিহাস বলে, সংকটের মাঝেই জন্ম নেয় বিপ্লব। মানুষ জেগে উঠলে, বিশ্ববিবেক যদি একত্রিত হয়, তবে হয়তো নতুন এক মানবিক বিশ্ব গড়ে ওঠা সম্ভব। অন্যথায়, সভ্যতার এই সংকট আরও গভীর হবে, বৈষম্যের দেয়াল আরও উঁচু হবে, আর দুর্ভোগের শেষ কোথায়, তা কেউই জানে না। বিশ্বনেতারা বড় বড় সম্মেলন করে, বিবৃতি দেয়, কিন্তু বাস্তবিক কোনো পরিবর্তন আনে না। কারণ, পুঁজির নিয়ন্ত্রকরা চাইলে পৃথিবীর চেহারা বদলে যেতে পারত, কিন্তু তারা সেটা চায় না। যুদ্ধ ও সংকট তাদেরই হাতিয়ার, আর দুর্বল দেশগুলোর জনগণ কেবল তাদের স্বার্থরক্ষার গিনিপিগ। ফলে মানবতার কান্না দিন দিন বেড়েই চলেছে।

জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে যুদ্ধ-সংঘাত, দারিদ্র্য থেকে সামাজিক অনৈতিকতা, সব মিলিয়ে বিশ্ব এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই নিবন্ধে আমরা আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার বহুমাত্রিক সংকট, এর মূল কারণ এবং সম্ভাব্য সমাধানের পথ নিয়ে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করব। মানুষের সভ্যতা কি এই অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে পারবে, নাকি আমরা এক অনিবার্য বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছি? সময় এসেছে এসব প্রশ্নের গভীরে যাওয়ার।

বিশ্বব্যবস্থার বর্তমান সংকট: ১. বিশ্ব রাজনীতি এখন টালমাটাল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, মধ্যপ্রাচ্যের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি, দক্ষিণ চীন সাগরের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন এক গভীর অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পরাশক্তিগুলোর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা ও সামরিক শক্তির প্রদর্শন সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। এই সংঘাত শুধু নির্দিষ্ট অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নেই; বৈশ্বিক অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও মানবিক সংকটকেও গভীরভাবে নাড়া দিচ্ছে। শরণার্থী সমস্যা তীব্রতর হচ্ছে, খাদ্য ও জ্বালানির দাম লাফিয়ে বাড়ছে, যুদ্ধের হুমকিতে কাঁপছে নানা দেশ। রাজনৈতিক দ্ব›েদ্বর জেরে বিশ্ব এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় কী? শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ ক‚টনৈতিক আলোচনার শক্তিশালী প্রয়োগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। শক্তির লড়াই নয়, সংলাপই পারে বিশ্বকে নতুন বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে। এখন সময় বিশ্বনেতাদের বুদ্ধিদীপ্ত ও দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালনেরÍযাতে যুদ্ধ নয়, শান্তির আলোয় আলোকিত হয় আগামী পৃথিবী। ২. বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য প্রতিনিয়ত গভীরতর হচ্ছে। পৃথিবীর বৃহত্তম কর্পোরেশনগুলো, যেগুলোর হাতে বিশাল সম্পদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, বিশ্বের সম্পদের প্রায় পুরো অংশের মালিক। অন্যদিকে, লক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্র্যের শিকার হয়ে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করছে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য। একটি বড় অংশের জনসংখ্যা, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর, বৈশ্বিক বাজারের অপ্রতিরোধ্য শক্তির কাছে এক ধরনের দাসত্বের মতো পরিস্থিতির মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীর ১০% ধনী ব্যক্তির হাতে রয়েছে বিশ্বের মোট সম্পদের ৮৫%, আর বাকি ৯০% মানুষ, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত, তাদের ভাগে মাত্র ১৫% সম্পদ এসে পড়েছে। এই অমানবিক বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক সংকটই সৃষ্টি করছে না, বরং সামাজিক অস্থিরতা, অস্থির পরিস্থিতি এবং অপরাধ প্রবণতা বাড়ানোর কারণও হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বজুড়ে এমন শোষণ এবং বৈষম্য, যেখানে কিছু মানুষ আকাশে উড়ছে, আর অন্যরা বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে, তা মানবতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একে অপরকে টেনে নিচ্ছে এমন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি, যেন একদিন সবাই সমানভাবে সুযোগ পায় উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে।

৩. বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলছে, যার প্রভাব আমরা প্রতিদিনই অনুভব করছি। গ্রীনহাউস গ্যাসের অতিরিক্ত নিঃসরণ, বিশেষত কার্বন ডাইঅক্সাইড, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে, যার ফলস্বরূপ বরফ গলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে, এবং প্রকৃতিতে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন আসছে। সমুদ্রের পানি বাড়ার কারণে উপক‚লীয় অঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে, এবং বিশ্বের বহু শহর এখন বিপদমুক্ত নয়। গ্রীষ্মকালে ভয়াবহ খরা, শীতকালে দীর্ঘমেয়াদি বৃষ্টি ও বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে, যা মানুষের জীবনযাত্রাকে সংকটে ফেলছে। এর সঙ্গে একযোগে বনাঞ্চলের ক্ষতি, জীববৈচিত্র্যের হ্রাস এবং খাদ্য উৎপাদনে সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে মানবজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে ব্যাপক শিল্পায়ন ও অদূরদর্শী ব্যবহারিত প্রযুক্তি পরিবেশের উপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করছে। উন্নত দেশগুলোতে যেসব কারখানা, যানবাহন ও শিল্পোৎপাদন ব্যবস্থা কাজ করছে, সেগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস পৃথিবীতে নিঃসৃত হচ্ছে। যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশগুলোর উপর। এই দেশগুলো প্রতিবছর বন্যা, খরা, সাইক্লোন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে, অথচ তাদের অবদান গ্লোবাল উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কম।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, যদি এই অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর আবহাওয়া এতটাই চরম হয়ে উঠবে যে, অনেক অঞ্চলের মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। ব্যাপক আকারে সাগরের পানি বৃদ্ধি, তাপমাত্রার বিপজ্জনক বৃদ্ধি, খাদ্য সংকট এবং পানির অভাব বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করবে। এমতাবস্থায়, বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। পরিবেশ রক্ষা করতে হবে, উন্নত দেশগুলোকেও তাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে হবে, এবং সেইসাথে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহারে উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোরও সহযোগিতা প্রয়োজন, যাতে তারা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারে এবং বিপদমুক্ত জীবনযাত্রা গড়ে তুলতে পারে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ীরা, বিজ্ঞানী ও নাগরিকরা একযোগে পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী হলে বিশ্বে পরিবেশের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার সম্ভব। আমাদের এখনই সতর্ক হওয়া দরকার, তা না হলে ভবিষ্যতে পেতে হবে এক অবর্ণনীয় দুর্দশার মুখ। ৪. প্রযুক্তির অপব্যবহার ও নৈতিক সংকট- আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে অনেক সহজ ও সুবিধাজনক করেছে, তবে এর অপব্যবহারও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আমাদের সমাজ, অর্থনীতি এবং মানবিক সম্পর্কের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক নতুন ধরনের তথ্য বিপর্যয় শুরু হয়েছে। একদিকে যেমন এটি যোগাযোগকে দ্রুততর করেছে, অন্যদিকে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানোর হারও অনেক বেড়েছে। ফেসবুক, টুইটার এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের মাধ্যমে মিথ্যা খবর, হ্যাকিং ও সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এমনকি কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যও এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া, প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এক নতুন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে, মানুষ ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ভিডিও গেমস এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে বাস্তব জগত থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সামাজিক সম্পর্কগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের পরিসর সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যেও। একে “ডিজিটাল আইসোলেশন” বলা হচ্ছে, যা আমাদের সমাজের মধ্যে একাকিত্ব ও হতাশার সৃষ্টি করছে। এছাড়া, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেট এবং স্মার্ট ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে আমাদের প্রাইভেসি আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। 

সাইবার অপরাধীরা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে এবং এমনকি হয়রানির উদ্দেশ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংগঠিত করছে। আরেকটি বড় হুমকি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (অও) মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার। প্রযুক্তির এ বিশাল অগ্রগতি মানবিক ও বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এখন আর যুদ্ধের মাঠে মানুষ সরাসরি উপস্থিত নয়; প্রযুক্তির মাধ্যমে রোবট ও ড্রোন যুদ্ধের মধ্যে অংশ নিচ্ছে। এসব অস্ত্রের ব্যবহারে বিপুল রক্তপাত ও বিধ্বংসী পরিণতি হতে পারে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য সংকট সৃষ্টি করছে।

সম্ভাব্য সমাধান ও ভবিষ্যতের করণীয়: ১. কূটনৈতিক সংলাপ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ ও সংঘাত নিরসন করা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। যুদ্ধের কারণ নির্ণয় করে, কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করতে হবে। ২. অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ধনী দেশগুলোকে দরিদ্র দেশগুলোর উন্নয়নে আরও কার্যকরভাবে সহায়তা করতে হবে। ন্যায্য বাণিজ্য নীতি গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা সম্ভব। সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, সুষ্ঠু শ্রমনীতি ও ট্যাক্স ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন জরুরি। পরিবেশ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, কার্বন নিঃসরণ কমানো, বন সংরক্ষণ, সবুজায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ৪. প্রযুক্তির নৈতিক ব্যবহার ও জনসচেতনতা জরুরি। প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনে বিপুল পরিবর্তন এনেছে, তবে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রযুক্তি আমাদের কাজের ধরন, যোগাযোগের মাধ্যম, শিক্ষা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, কিন্তু এর অপব্যবহারও আমাদের সমাজে নানা সংকট সৃষ্টি করছে। বর্তমান যুগে সামাজিক মাধ্যম একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হলেও এর মাধ্যমে ভুয়া তথ্যের বিস্তার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ভুয়া তথ্য রোধে কড়াকড়ি আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবকে নজরদারি করতে এবং সত্যের প্রতিফলন ঘটাতে বিভিন্ন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

তবে, প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করতে হবে। প্রযুক্তি আসক্তি বর্তমানে এক ভিন্ন ধরনের সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। শিশুরা এবং তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তি ব্যবহারে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছে, যা তাদের শিক্ষা এবং সামাজিক দক্ষতার বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ অবস্থায়, পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করতে হবে, যাতে এটি শিক্ষার উন্নতি এবং সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়ক হয়, একে নির্ভরশীলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সবার দায়িত্ব হচ্ছে প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করা। এজন্য, সরকারের পাশাপাশি সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজকেও একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সচেতন, শক্তিশালী ও উন্নত সমাজ গড়ে তোলা যায়। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে আমাদেরকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক ন্যায্যতা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে আমরা মানবতার ভবিষ্যৎকে একটি নিরাপদ ও উন্নত পথে পরিচালিত করতে পারি।

বিশ্বকে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদেরকে দায়িত্বশীল হতে হবে। বৈশ্বিক সংকট সমাধানে সরকার, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ এবং প্রতিটি ব্যক্তির একযোগে কাজ করা জরুরি। শুধুমাত্র সচেতনতা এবং কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমেই আমরা একটি উন্নত ও মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলতে পারবো।


মানবকণ্ঠ/আরআই