Image description

মানুষের জীবনে  দরিদ্রতা একটি অভিশাপ। দরিদ্রকে কেউই ভালোবাসে না। দরিদ্র্য মানুষের সান্নিধ্যে কেউ আসতে চায় না। গরিব মানুষের সাথে অন্য সবল আত্মীয়-স্বজনরা মিশতে চায় না। পরিবারে দরিদ্র মানুষের প্রতি কেউ সু-দৃষ্টি রাখে না। তাই আমাদের সমাজে দরিদ্র মানুষ ও পরিবারকে অভিশাপ হিসেবে দেখে অনেকেই। দরিদ্র পিতাকে সন্তানেরা পছন্দ করে না। তাই দরিদ্র মানুষ পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা। 

দরিদ্রতা যেনো ব্যক্তি পরিবার, সমাজকে অচল করতে না পারে সেই জন্য পরিবারকে শিক্ষিত করে তৈরি করতে হবে। নিজ সন্তান, ভাই বোন, আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী সবার জন্য শিক্ষাগ্রহণ অবশ্যই বাধ্যতামূলক হিসেবে বাস্তবায়ন করতে হবে। শিশু থেকেই বিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে। যার যার নৈতিক শিক্ষা পরিবার থেকে দেয়ার নিয়ম মানতে হবে। পিতা মাতা দাদা দাদি চাচা চাচি সকল সদস্যকে শিশুর প্রতি ভালো নজর রাখতে হবে। তার শিক্ষা, খাওয়া-দাওয়া, চাল-চলন, কমপ্লিট আদর্শ শিক্ষা যেনো পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। দারিদ্র্য যেনো আমি ও আমার পরিবারকে গ্রাস করতে না পারে সেই কর্মসূচি পরিবারে থাকতে হবে। সন্তানের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি চিন্তায় রেখে তাকে পড়ালেখা শিখাতে হবে। 

শিক্ষিত পরিবারে সহজে অভাব আসতে পারে না। অভাব মুক্ত জীবনের জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। রাস্তায় বের হলে অভাবী দরিদ্র মানুষের লাইন। কর্মহীন মানুষের সংখ্যা দেখলে মন খারাপ হয়। তাদের পাশ দিয়ে দামি-দামি গাড়ি চলে। ধনাঢ্য ব্যক্তি, পরিবার, সরকারি কর্মকর্তাদের দামি গাড়ি দেখলে মনে হয়, আমরা সিঙ্গাপুরে বা অন্য কোনো  উন্নত মানের নাগরিক সেবা সশ্রদ্ধ দেশে আছি। অথচ গাড়ি ঘিরে রাখছে গরিব ও দরিদ্র মানুষ। এই যদি হয়, দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণের জীবনমান, তাহলে জাতি অর্থনীতির উন্নয়ন অগ্রগতি কোথায় পেয়েছে। 

জনগণের আয় আর ব্যয়ের মিল নেই। আয়ের সাথে লোন করে জীবন চালাতে হচ্ছে। অল্পসংখ্যক মানুষ ছাড়া অন্যদের লোন করে চলতে হচ্ছে। এই সংখ্যা কোটি কোটি। কিন্তু কিছু মানুষ রাতারাতি টাকার কুমির বনে যেতে দেখছি। তারা কিছু ব্যবসায়ী আর সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু ৮৫ ভাগ মানুষ চরমভাবে অভাব-অনটনে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের। ওরা দেশপ্রেমিক মানুষ। তারা কাউকে বলতে পারে না। হাত পাতা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তারা নীরবে নিভৃতে ক্রন্দন করছে। সরকারকে বলবো সেই মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের পরিবারের জন্য কিছু করুন। 

লেখাপড়া জানা অনেক পরিবার আছে কর্মসংস্থান না পেয়ে কঠিনভাবে অর্থ সংকটে আছে। ওদের জন্য সরকারের পলিসি বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমান সরকার দরিদ্র মানুষের জন্য টিসিবির ভোগ্যপণ্যের ব্যবস্থা করেছে। যা পর্যাপ্ত নয়। ১৮ কোটি জনগণের জন্য এক কোটি কার্ড এটি কিছুই না। এই কার্ড সংখ্যা আরো বাডাতে হবে। 

কার্ড বণ্টনেও দুর্নীতি আছে। আবার এই দুস্থ জনগণের পণ্যসামগ্রী বাইরে বিক্রির অভিযোগ আছে।  এই সাধারণ জনগণের ভোগ্যপণ্য চোরা জায়গায় বিক্রির অভিযোগ আছে। বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা প্রদানে ইউপি প্রশাসন নয়ছয় করে কার্ড প্রদানে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়। গরিবের চাল, গম চুরি করে বহু জনপ্রতিনিধি টাকার মালিক হয়েছে। এখনো দেশ মাটির সাথে মিশিয়ে আছে এই অভাবী মানুষরা। তারা দিন-রাত গাধার মতো শ্রম দিয়ে ও দু’বেলা ভাত-তরকারি জোগাড় করতে পারে না। 

আমাদের দেশের অর্থনৈতিক কর্মসূচি গরিব দুস্থ মানুষের সহায়ক হয়ে ওঠেনি। এই দেশের অর্থ ব্যবস্থা পুঁজিবাদী জনগোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করে। শিল্পপতি, কোটিপতি, আরো ধনী হবে। গরিব মানুষ কাজ করেও গরিব থাকবে, দু’বেলা অন্ন-বস্ত্রর চাহিদা  পূরণ করতে পারবে না। তাই হচ্ছে সমাজে গরিবের কোনো মূল্য নেই। সমাজে এতো বিভাজন দূরত্ব মোটেও মেনে নেয়া যায় না। 

গরিব মানুষের ট্যাক্সের টাকায় উপজেলা থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত, সব সরকারি অফিসে এসি। কর্মকর্তাদের জন্য কোটি টাকার দামি গাড়ি, বাড়ি। তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে, আধুনিক জীবনযাপনের সব রকম সুবিধে। জনপ্রতিনিধি থেকে রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের ব্যক্তি পারিবারিক জীবন-জীবিকার অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। হয়নি শুধু  দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের। যারা ভোটার, যারা কৃষক, কুলি দিন-রাত মাঠে খেটে  কাজ করে দেশকে ভালো বাসছে, তারা এখনো দু’বেলা ভাত, মাথা রাখবার ঠাঁই রাষ্ট্র থেকে পায়নি। 

বাংলাদেশের সাথে আরো যেসব দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তারা কিন্তু বিশ্বে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে দেখেছি। তারা ব্যবসা, শিল্প, রাজনীতিক, অর্থনিতি, গণতন্ত্র,  নির্বাচন,  ভোট, মানবাধিকার সব কিছুতেই প্রতিষ্ঠিত। আমরা সেই জায়গাতে পৌঁছাতে সক্ষম হইনি। আমাদের মাঝে, রাষ্ট্র, জনবল, শিক্ষা,  সবকিছু থাকলেও কেন জানি আমাদের সার্বিক সফলতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশপ্রেম, মানবাধিকারের ঘাটতি আছে। উচ্চাভিলাষী জীবন, দুর্নীতি, অপচয় জাতিকে ধ্বংস করছে। আমাদের চিন্তা-চেতনায় দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। এসব চিন্তা ও ভোগবিলাস ত্যাগ করে সাধারণ জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা গেলে দেশ কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন করবে। গরিব ও দরিদ্র মানুষ স্বস্তি পাবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। 


মানবকণ্ঠ/এফআই