
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারির সুপারিশ উপস্থাপন করা হতে পারে। এই সুপারিশ গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করতে পারে বলেও তিনি জানান।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের ২২ দফা অনুসরণ করে ‘সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে সুপারিশগুলো কার্যকর করা সম্ভব। এই আদেশ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোটের মাধ্যমে জনগণের অনুমোদন পেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত
আলী রীয়াজ জানান, বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সমন্বিত পরামর্শে বলা হয়েছে, ‘সংবিধান আদেশ’ ও ‘গণভোট’—এই দুটি বিকল্প সমন্বয় করে জুলাই সনদের সংবিধান সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, “প্রস্তাবিত গণভোটের বিষয়টি সংবিধান আদেশে উল্লিখিত থাকবে এবং এটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে আয়োজিত হবে।”
এছাড়া, কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পরামর্শ চাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, যদিও এ বিষয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে বিকল্পগুলো কমিয়ে আনার জন্য সময় চেয়েছে। এই বিবেচনায় কমিশন আলোচনা মুলতবি করেছে, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।
সুপারিশ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা
কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ছয়টি এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে একটি—মোট সাতটি সুপারিশ রয়েছে। এগুলো কমিয়ে এনে সরকারের জন্য বাস্তবায়ন সহজতর করাই কমিশনের লক্ষ্য। তিনি বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে বিকল্পগুলো কমিয়ে আনতে পারলে সরকারের জন্য সুপারিশ বাস্তবায়ন সহজ হবে।”
আলী রীয়াজ আরও জানান, কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। তিনি ফিরে আসার পর সুপারিশগুলো নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। কমিশন আশা করছে, আগামী মাসের শুরুতে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক হবে এবং একটি সমন্বিত সুপারিশ উপস্থাপন করা যাবে।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিতি ও অংশগ্রহণকারী দল
ব্রিফিংকালে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তৃতীয় দিনের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই উদ্যোগ জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকারের কাছে সুপারিশগুলো উপস্থাপনের পর এর বাস্তবায়ন কীভাবে এগিয়ে যায়, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি রয়েছে।
Comments