
বাংলাদেশের উত্তরের জেলাগুলোতে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও, দেশের মধ্যাঞ্চলে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, আত্রাই নদী অববাহিকার এলাকাগুলোতে নতুন করে প্লাবনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের ভেতরে এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ভারী বৃষ্টির কারণে এই বন্যা হচ্ছে। রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যার পানি কমছে, তবে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। নওগাঁ এবং আত্রাই নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বন্যার কারণে রংপুর, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর পশ্চিম পাশে বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার অংশ ধসে গেছে। এতে লালমনিরহাট-রংপুর সড়ক যোগাযোগ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। দ্রুত মেরামত করা না হলে বাঁধের সঙ্গে সেতুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল রায় জানান, তিন দিন পর পানি নামতে শুরু করলেও ফসল ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই বাঁধটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, বাঁধটি এলজিইডির হলেও এর গুরুত্ব বিবেচনায় তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, তিস্তার পানি এখন বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার বাঁধের ডিজাইন ও নির্মাণ সামগ্রীতে সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, হাজার কোটি টাকা খরচ করে বাঁধ তৈরি হলেও সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, ফলে সামান্য ঢেউয়েও তা ভেঙে যায়।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, বর্তমানে শুধু নওগাঁর আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টা তা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর পানি কমবে।
তবে, পদ্মা নদীর পানি আরও দুই দিন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, বড় বন্যার আশঙ্কা কেটে গেছে, তবে কিছু জেলা অল্প সময়ের জন্য প্লাবিত হবে। পানি নেমে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে।
Comments