Image description

বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও সহিংসতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে জনজীবনে অস্থিরতা কমাতে সরকার কঠোর অবস্থানে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক জরুরি সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে 'সাঁড়াশি অভিযান', যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে চাঁদাবাজদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করা। এই অভিযানের আওতায়, চাঁদাবাজদের হাতে-নাতে ধরলেই তাৎক্ষণিকভাবে 'ডিটেনশন অর্ডার' (আটকাদেশ) দেওয়া হবে এবং মাত্র সাত দিনের মধ্যে মামলার তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে এই অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেখানে চাঁদাবাজি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন এই নির্দেশনায়, হাট-বাজার, বাস-ট্রাক-টেম্পু স্ট্যান্ড, রেল-নৌ-বাস টার্মিনাল, ফুটপাতসহ জনসমাগমস্থলে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলেই পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালাবে।

এই অভিযানের মূল বৈশিষ্ট্য হলো দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়েরের পর এক সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত শেষ করতে হবে। এরপর, এক মাসের মধ্যেই মামলার রায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে, যাতে অপরাধীরা দ্রুত সাজা পায় এবং সমাজে চাঁদাবাজির প্রবণতা কমে আসে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "যে দলেরই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। ধরা পড়লে কোনো তদবিরেও চাঁদাবাজদের ছাড়া হবে না।" 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি থানার ওসি থেকে শুরু করে ডিসি, এডিসি এবং এসিদের এই বিষয়টি নিবিড়ভাবে মনিটরিং করতে বলেছেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ সদস্যদেরও চাঁদাবাজদের ধরতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ডিটেনশন হলো একটি আটকাদেশের অবস্থা। কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করার পর মুক্তি না দিয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারা মোতাবেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটকাদেশের নির্দেশ দিয়ে থাকেন। এর মেয়াদ প্রথম পর্যায়ে ৩০ দিন এবং পরে ৯০ দিন, এভাবে মোট ১২০ দিন পর্যন্ত একজন আসামিকে আটকে রাখা যায়। এই ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে চাঁদাবাজদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (পিআর অ্যান্ড মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, বিশেষ অভিযানসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশ থেকে মোট ১,৫৭২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১,০০৭ জন মামলা ও ওয়ারেন্টের আসামি এবং ৪৬৫ জন অন্যান্য ঘটনায় গ্রেফতার।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং আইজিপি বাহারুল আলমও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তাঁরা উল্লেখ করেছেন, যত উঁচু স্তরের চাঁদাবাজই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না এবং গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে সারাদেশে চাঁদাবাজ ও আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।