বন্দরের দায়িত্ব বিদেশিদের দিতে ড. ইউনূসের আগ্রহ কেন, প্রশ্ন আনু মুহাম্মদের

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি কোম্পানির কাছে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি এই প্রক্রিয়াকে দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। শনিবার(২১ জুন) রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা কেন ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনা সভায় গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই কোম্পানি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর। এর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরা।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রশ্ন তুলেছেন, "মোহাম্মদ ইউনূসের ভাষায় ডিপি ওয়ার্ল্ড পৃথিবীর সেরা। শেখ হাসিনাও এই বন্দর ইজারা দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন। তার (শেখ হাসিনা) তো একটা রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ থাকতে পারে, কিন্তু মোহাম্মদ ইউনূসের স্বার্থটা কী? তিনি কেন এতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তা প্রশ্নের দাবি রাখে।"
সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, "হাসিনা সরকার এলএনজি আমদানিনির্ভর দেশ তৈরি করে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারেরও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কোনো উদ্যোগ নেই। উল্টো এলএনজি আমদানি চুক্তি করেছে। স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এখন বিদেশি কোম্পানির হাতে চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সবদিক থেকেই দেখা যাচ্ছে সরকার উল্টোপথে হাঁটছে।"
তিনি জাতীয় সক্ষমতা তৈরির ওপর জোর দিয়ে বলেন, বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর না করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে এই সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
আনু মুহাম্মদ বিশ্বব্যাংক, এডিবি কিংবা আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে করা চুক্তিগুলো জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানান। তিনি বলেন, "শেখ হাসিনার আমলে প্রাণ প্রকৃতি বিনাশকারী ও দেশবিরোধী কী কী ক্ষতিকর চুক্তি হয়েছে তা জাতির সামনে উন্মুক্ত করতে হবে। ক্ষতিকর চুক্তি বাদ দিতে হবে। ড. ইউনূস কেন সেগুলো উন্মুক্ত করছে না, প্রশ্ন তোলেন তিনি।"
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আনু মুহাম্মদ। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মোহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে তার আস্থাভাজনরা রামপাল, রূপপুরের মতো বড় প্রকল্পের বিষয়ে শেখ হাসিনার আমলের মতোই কথা বলছেন এবং যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদের প্রতিহত করার মনোভাব দেখা যায়।
বিদেশি বিনিয়োগ এলে সেই সম্পর্কে প্রশ্ন করা যাবে না—এ প্রবণতাকে ভুল আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, "কেন, কী উদ্দেশ্য বিদেশি বিনিয়োগটি এলো তা খতিয়ে দেখতে হবে। তাদের বিনিয়োগ ভবিষ্যতে আশীর্বাদ হবে না, অভিশাপ হবে তা দেখতে হবে।"
আনু মুহাম্মদ জানান, আগামী ২৭ ও ২৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা ও বিদেশি কোম্পানির ভূমিকা নিয়ে বামধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় মঞ্চ গঠিত হবে। তারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম লংমার্চ করবেন।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা। তিনি বলেন, ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করা হয়নি। লেখক ও গবেষক ড. মাহা মির্জা উল্লেখ করেন, কৌশলগত খাতে বেসরকারিকরণ টেকসই উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি।
সভায় আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বন্দরের সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লা বাহার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম প্রমুখ।
Comments