
দেশের ২৮টি ছাপাখানা চলতি শিক্ষাবর্ষের ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ৭৪২ কপি পাঠ্যবই নিম্নমানের কাগজে ছাপিয়েছে। এসব বইয়ে কাগজের পুরুত্ব (মোটা), ব্রাইটনেস (উজ্জ্বলতা) ও টেকসই ক্ষমতা (বার্স্টিং ফ্যাক্টর) কিছুই ঠিক নেই। সারা দেশের মাঠ পর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্টের পর এমন প্রতিবেদন তৈরি করেছে ইন্সপেকশন প্রতিষ্ঠান।
বই ছাপার পর মান যাচাইয়ের জন্য বেসরকারি হাই-টেক সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিস বিডিকে নিয়োগ দেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। গত ১৮ জুন এ বিষয়ে এনসিটিবিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে মান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানটি।
নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপিয়ে সরবহরাহ করা অভিযুক্ত ২৮ ছাপাখানা হলো—লেটার এন্ড কালার, বর্ণমালা প্রেস, রেদওয়ানিয়া প্রেস এন্ড পাবলিকেশন, ন্যাশনাল প্রিন্টার্স, দোয়েল প্রিন্টার্স, দ্য গুডলাক প্রিন্টার্স, মিলন প্রিন্টিং প্রেস, অনুপম প্রিন্টার্স লিমিটেড, এমএস নাহার প্রিন্টার্স, সুবর্ণা প্রিন্টার্স, শাফিন প্রিন্টিং প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স, অক্সফোর্ড প্রেস এন্ড পাবলিকেশন, আমাজন প্রিন্টিং প্রেস, এরিস্ট্রোক্রেট সিকিউরিটি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, এমএস টাঙ্গাইল প্রিন্টার্স, পিবিএস প্রিন্টার্স, ভাই ভাই প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স, দিগন্ত অফসেট প্রিন্টার্স, জিতু অফসেট প্রিন্টিং প্রেস, এমএস ঢাকা প্রিন্টার্স, এমএস মিলন প্রিন্টিং প্রেস, এমএস ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, মাস্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেড, নাইমা আর্ট প্রিন্টার্স, ন্যাশনাল প্রিন্টার্স, পাঞ্জেরি প্রিন্টার্স, সরকার অফসেট প্রেস ও আনন্দ প্রিন্টার্স। এর মধ্যে পূর্বে নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপিয়ে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছিল সাত ছাপাখানা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এরিস্ট্রোক্রেট সিকিউরিটি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৪০ হাজার ৬৪২ কপি বই নিম্নমানের কাগজে ছাপিয়েছে। পাঞ্জেরি প্রিন্টার্স ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৯ কপি, লেটার এন্ড কালার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩১৪ কপি এবং এমএস নাহার প্রিন্টার্স ১ লাখ ১৫ হাজার ১০০ কপি নিম্নমানের কাগজে বই দিয়েছে। এছাড়া অন্যদের মধ্যে বর্ণমালা প্রেস ৪৪ হাজার ১৫০ কপি, রেদওয়ানিয়া প্রেস এন্ড পাবলিকেশন ৪৫ হাজার ৪২১ কপি, দ্য গুডলাক প্রিন্টার্স ৩০ হাজার ৬৭৬ কপি, মিলন প্রিন্টিং প্রেস ৩১ হাজার ৬৬৯ কপি, সুবর্ণা প্রিন্টার্স ২৯ হাজার ৭৫৫ কপি, আমাজন প্রিন্টিং প্রেস ৭১ হাজার, এমএস টাঙ্গাইল প্রিন্টার্স ৫৭ হাজার ৮২৭ কপি, দিগন্ত অফসেট প্রিন্টার্স ৪৪ হাজার ৬২৩ কপি, মাস্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেড ৯৫ হাজার ১৬৯ কপি ও নাইমা আর্ট প্রিন্টার্স ৩৫ হাজার পাঠ্যবই নিম্নমানের কাগজে ছাপিয়েছে।
এদিকে নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপানোর তালিকা থেকে নাম কাটাতে এনসিটিবিতে তদবির করছেন ২৮ ছাপাখানার মালিকরা। এক্ষেত্রে কয়েক জনের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।
এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘ইন্সপেকশন প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত প্রতিবেদন তিনি এখানো হাতে পাননি। তবে প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী যারা নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই সরবরাহ করেছে, তাদের ভালো কাগজে নতুন করে ছাপিয়ে বই রিপ্লেস করে দিতে চিঠি দেওয়া হবে। যদি তারা তা না নেয়, তাহলে তাদের জমা রাখা ২০ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হবে। এ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।’
Comments