Image description

এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা এক প্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, একদিকে আইনি জটিলতার অজুহাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ইশরাক হোসেনের শপথ বিলম্বিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে সচিবালয় প্রাঙ্গণে কর্মচারীদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে পৌর প্রশাসন ব্যবস্থা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনডিআর, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, চট্টগ্রাম বন্দর, এমনকি সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডার পর্যন্ত একযোগে সংস্কার বিরোধী প্রতিরোধে নেমেছে। গতকাল একটি ইউটিউব ভিডিওতে তিনি এসব কথা বলেন।  

জিল্লুর রহমান বলেন, পুরো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এক প্রকার নিয়ন্ত্রণহীনতা, অনাস্থা ও বিভ্রান্তির আবহ তৈরি হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে শপথ পড়ানোর বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও সরকার এবং প্রশাসন বিষয়টিকে উচ্চ আদালতের বিচারাধীন বলে টেনে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান বন্ধ রেখে একটি অনির্বাচিত ও অস্থায়ী প্রশাসনিক ব্যাখ্যায় নগরভবন কার্যত তালাবন্ধ করা রাখা হয়েছে।

এর ফলে শুধুমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সাংবিধানিক অধিকারী নয়, সাধারণ নাগরিকরাও বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

তিনি আরো বলেন, এই ঘটনা প্রবাহের সমান্তরালে আরো বিস্ফোরণ ঘটে চলেছে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে। সরকারের সদ্য প্রণীত সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ এর বিরুদ্ধে কর্মচারীদের ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এমনকি ২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তা সংগঠন আন্ত-ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ কলম বিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এই সরকারের বিরুদ্ধে আমলাতন্ত্র খুবই প্রতিক্রিয়াশীল ও সংঘবদ্ধ হয়ে উঠেছে যেটা একটি গভীর সংকেত। কারণ অতীতে সামরিক কিংবা জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারের সময়ও আমলারা এই মাত্রায় সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি।  

রাজনৈতিক মঞ্চে এ সময় বিএনপি একটা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেছে। একদিকে তারা ভার্চুয়াল বক্তৃতা সমাবেশ এবং তারুণ্য কেন্দ্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক সংহতি জোরদার করছে। অন্যদিকে সরকারের উপর ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের চাপ অব্যাহত রেখেছে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও খারাপের দিকে যাচ্ছে। রাজধানীর ব্যস্ত এলাকায় খুন, ছিনতাই, সশস্ত্র হামলার মতো ঘটনা ঘটছে প্রকাশ্যে। কিন্তু পুলিশের প্রতিক্রিয়া প্রায় অনুপস্থিত। এমনকি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুলিশের মধ্যে যে নতুন দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে তাও কার্যকর হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের সামনে দুটো পথ খেলা। প্রথমত অবিলম্বে প্রশাসনিক ও আইনগত দিক থেকে একটা স্বচ্ছ রোড ম্যাপ ঘোষণা করা যাতে নির্বাচন সংস্কার ও নিরাপত্তা বিষয়ে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত জনগণের সাথে এবং বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ এবং সমঝোতা বাড়ানো যাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা ফেরানো যায়। 

তবে বাস্তবতা হচ্ছে এই সরকারের রাজনৈতিক মূলধন ক্রমেই ক্ষয়ে যাচ্ছে। একদিকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতা অন্যদিকে আমলাতন্ত্রের বিরোধিতা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এক গভীর শাসন সংকটে পড়েছে।