Image description

বৃহস্পতিবার পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বাজারে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় দলের অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের জেরে গলাচিপা ও দশমিনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে শুক্রবার (১৩ জুন) ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার রাত আটটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত গলাচিপার চর কাজল ও আশপাশের এলাকায় টানা কয়েক দফা হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে রাত দেড়টা পর্যন্ত গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর চর বকুলবাড়িয়া এলাকায় অবরুদ্ধ ছিলেন বলে অভিযোগ করেন।

স্থানীয়রা জানান, ঈদুল আজহার পরপরই গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর গলাচিপা ও দশমিনায় কয়েকটি জনসভায় স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দেন। এর জেরে বুধবার রাতে চর কাজলে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরাও বিক্ষোভ করে। মিছিল শেষে তাঁরা স্থানীয় বিএনপি অফিসে হামলা ও ভাঙচুর চালালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

বিএনপির একাধিন নেতার অভিযোগ ভিপি নুরের নেতৃত্বে পরিচালিত গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা তাদের অফিসে হামলা চালিয়েছে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে উত্তেজনা তৈরি করছেন। অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের পটুয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহা আলম দাবি করেন, বিএনপির কর্মীরা চরবিশ্বাস ও চরশিবায় তাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। এসময় ভিপি নুরের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম নুরসহ অন্তত ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন।

ঘটনার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ভিপি নুর লেখেন, “রাত পৌনে ১০টা থেকে ১টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত আমি অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলাম। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে এখন অব্দি সন্ত্রাসীদের রাস্তা থেকে হটাতে পারেনি। নির্বাচনে এই প্রশাসন কীভাবে নিরপেক্ষ থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
যদিও পরবর্তীতে যৌথবাহিনীর সহযোগীতায় তিনি উদ্ধার হন। 

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদের সভাপতির বক্তব্যের ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশাদুর রহমান বলেন, “বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।”

এরি মধ্যে দুই দল পৃথক পৃথক ভাবে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষনার ডাক দেয়। বিএনপি সাভাপতির বাসভবনে আর গণ অধিকার পরিষদ তাদের কার্যালয়ে এই প্রোগ্রাম করবে বলে জানা যায়। 

বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন ও গণধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নূরের  নির্বাচনী এলাকা এটি। 

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান এবং দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ইরতিজা হাসান স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে আইন-শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল আটটা থেকে রবিবার (১৫ জুন) সকাল আটটা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এই সময়ে গলাচিপা পৌরসভা, চরবিশ্বাস ও বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন ও দশমিনা সহ আশপাশের এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির জমায়েত, সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, মিছিল এবং অস্ত্র বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

পটুয়াখালী জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে এই সংঘর্ষ ও ১৪৪ ধারার ঘটনায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।