Image description

ঈদের ছুটিতে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে সোনারগাঁয় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল যুবদল কর্মী মামুন ভূঁইয়ার (৩৫)। কিন্তু ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে গাড়িতে তুলে দিয়ে তাঁদের থেকে বিদায় নেন। বিদায়ের সময় ছোট্ট দুই সন্তানের কপালে চুমু খেয়েছিলেন। নিজেও কপাল বাড়িয়ে নিয়েছিলেন সন্তানের চুমু। এর কিছুক্ষণ পরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মামুন মারা যান।

আজ বুধবার দুপুরে দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছিলেন মামুনের স্ত্রী ইমা আক্তার। বারবার বলছিলেন, ‘এই বিদায় যে শেষবিদায় হইব তা জানলে তো আমি তাঁর হাত ছাড়ি না খোদা। আমি তো তাঁরে চোখের আড়াল করতাম না। উনি তো খুনের রাজনীতি করতেন না। কোন পাপের শাস্তি পাইলাম আমরা। কোন কারণে আমার মাসুম বাচ্চাদের এতিম কইরা দিল।’ এ সময় তিনি তাঁর স্বামীর হত্যার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক জায়েদুল ইসলাম ওরফে বাবুকে দায়ী করেন।

মামুন ভূঁইয়ার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা মাঝিনা এলাকায়। এলাকার প্রয়াত আবদুল মান্নানের ৯ সন্তানের মধ্যে মামুন ষষ্ঠ। খুব বেশি পড়াশোনা করেননি। বাড়ির পাশেই মুদিদোকানের ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি এলাকায় গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ করতেন।

মাঝিপাড়া এলাকার বাসিন্দারা বলেন, মামুনদের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতি করে। তাঁর বড় ভাই বাদল ভূঁইয়া ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির রাজনীতি করায় ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন সময় তাঁদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পর বাদল ভূঁইয়ার সুবাদে যুবদলের সভা-সমাবেশে যেতেন মামুন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে মাঝিপাড়া এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ভুলতা ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন ওরফে খোকাকে আটক করেন এলাকাবাসী। সেখানে যুবদল নেতা বাদলের অনুসারী কর্মী-সমর্থকেরাও ছিলেন। আটক ছাত্রলীগ নেতাকে বাদলের বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে নিজের অনুসারীদের নিয়ে উপস্থিত হন জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক জায়েদুল ইসলাম। তখন জায়েদুল প্রভাব বিস্তার করে সাব্বিরকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাদলের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ শেষে এলাকা ছাড়ার সময় মাঝিপাড়া এলাকায় মামুনকে একা পেয়ে গুলি করা হয়। একটি গুলি তাঁর কানের পাশে মাথায় লাগে। উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মামুন মারা যান।

তবে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত জায়েদুল অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি ছাত্রলীগের খোকাকে লোকজন ধরছিল। সেখানে গোলাগুলি হইছে। কিন্তু আমি সেখানে ছিলাম না। আমি বাসায় ছিলাম।’