Image description

চলতি মাসের শেষদিকে জাপান সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সফরকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ষষ্ঠ ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে প্রথমবারের এ বৈঠকে বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে জাপান তার অস্বস্তির কথা জানাবে।

পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকটি নিয়ে বেশ নাটকীয়তা হয়। পূর্বনির্ধারিত বৈঠক হঠাৎ গত ১২ মে চিঠি দিয়ে স্থগিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রধান উপদেষ্টা সফরের আগে মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে জাপান হতবাক হয়। পরদিন আরেক চিঠিতে এফওসি আগের সময়ে হচ্ছে বলে জানানো হয়। বৈঠকে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের পরিবর্তে মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম দেবেন বলে জাপানকে জানায় ঢাকা।

পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক দুটি অংশে হবে। শুরুতে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা করবে দুই দেশ। পরের অংশে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা হবে। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সফরের সময় সম্ভাব্য কী কী বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করবে দুই দেশ। বাংলাদেশের অগ্রাধিকার অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সহযোগিতাসহ জাপানের অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্টস (ওডিএ)। অন্যদিকে জাপান জোর দেবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর।

কূটনীতিক সূত্র জানায়, চীনের প্রযুক্তি ও সহযোগিতায় ঢাকায় পহেলা বৈশাখের ‘ড্রোন শো’ ভালোভাবে নেয়নি জাপান। কী হলো, কেন হলো, কীভাবে হলো– তা নিয়ে অনুসন্ধান করে টোকিও। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো পূর্ব এশিয়ায় বলয় বাড়াচ্ছে চীন, যা পশ্চিমাসহ জাপানের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে চীন থেকে। প্রধান উপদেষ্টা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর করেন বেইজিংয়ে। চলতি মাসেই চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের বিশাল বহর বাংলাদেশ সফরে আসছে। এফওসিতে পুরো বিষয় বুঝতে চাইবে টোকিও। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ভারতকে বিশ্বস্ত বন্ধু মনে করে জাপান। এ জন্য ঢাকা-দিল্লির মধ্যে সুসম্পর্ক চায় দেশটি। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বাংলাদেশকে বার্তাও দিয়েছে টোকিও।

সূত্র জানায়, আঞ্চলিক বলয় বাড়াতে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী জাপান। এ বিষয়ে গত বছর পঞ্চম এফওসিতে একমত হয়েছে বাংলাদেশও। এবারের এফওসিতে দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, প্রতিরক্ষা, মেরিটাইম সিকিউরিটি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, কানেক্টিভিটি, অবকাঠামোগত সহযোগিতার মতো বিষয়ও থাকবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করবে দুই দেশ।

বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে এ অঞ্চলে জাপানের সহযোগী ও প্রতিযোগী দেশগুলোর পরিস্থিতি, সহযোগিতা এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে সমর্থনের মতো বিষয় রয়েছে।