
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুন দেশ’-এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেছেন, অর্থনীতি নিয়ে যে উদ্বেগের কথা বলা হচ্ছে তা খুবই লজিক্যাল রেশনাল যুক্তিসঙ্গত। এই উদ্বেগটা শুধু যে আপনার আছে তাই না, আমার মনে হয় বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখন রাজনীতি, অর্থনীতি বা বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে এ বিষয়গুলোর খবর রাখে। নানা কারণে খবর রাখে, এখন ইন্টারনেটের যুগ, ফলে আমার ধারণা, প্রায় প্রত্যেক মানুষের মনেই উদ্বেগ আছে।
গতকাল শুক্রবার সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামালের ইউটিউব চ্যানেল ‘অন্য মঞ্চ’-তে আয়োজিত এক টক শোতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সন্দেহ জাগে যে আমাদের রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করছেন, যাদের সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা, তাদের সেই উদ্বেগ আসলে কতটা। তারা আদৌ উদ্বিগ্ন কি না? কারণ এই প্রক্রিয়াটা যখন শুরু হয়েছে, তখন আমরা কারো কারো বক্তৃতা টেলিভিশনে শুনেছি, পত্রপত্রিকায় পড়েছি। অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন যে ট্রাম্পের এই ট্যারিফ আমাদের জন্য একটা নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসবে, নতুন সুযোগ নিয়ে আসবে। হতে পারে, কিন্তু সেই নতুন সম্ভাবনা, সেই সুযোগ সেটা তো আদায় করতে হবে, অটোমেটিক্যালি তো কোনো কিছু আসে না। সেটি আমরা করতে পেরেছি কি না।
সাগর বলেন, আজকে বেশ কয়েকটি পত্রিকা- প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, সমকালসহ প্রায় সব কয়টি পত্রিকায় একটি খবর আছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে থার্ড রাউন্ডের আলোচনা আগামী ২৯ জুলাই হতে যাচ্ছে। ১ আগস্ট থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেওয়া আছে। তাহলে আমরা এখন বৈঠক করতে যাচ্ছি থার্ড রাউন্ডের কখন? ২৯ জুলাই।
তার মানে মাসটা শেষ হয়ে যাওয়ার এক দিন মাত্র আগে। একেবারে শেষ সময়ে। মানে আগুন লেগে যখন সলতা পুড়তে পুড়তে আমার হাতের কাছে চলে আসছে, তখন আমি খোঁজ করছি যে আমি এই আগুন থেকে কিভাবে রেহাই পাব। এর আগে না কেন?
আবার এই যে বৈঠকটি হবে, আমি দেখলাম যে আমাদের কমার্স অ্যাডভাইজার এক রকম কথা বলছেন, কমার্স সেক্রেটারি এক রকম কথা বলছেন। একজন বলছেন, অনলাইনে বৈঠকটি হবে।
আরেকজন বলছেন যে না, ওরা যদি আমাদের ডাকে আমরা চলে যাব। কালকের দিন বাদে পরশু যদি বৈঠক হয়, সেই বৈঠকটি কিভাবে হবে আপনি এখনো ঠিক করে বলতে পারেন না। আপনি বলেন যে ডাকলে চলে যাব। তার মানে কী? এই জিনিসগুলো বোঝা যায়, পরিষ্কার হয় যে আপনার প্রস্তুতি কিংবা যাদের সঙ্গে আপনি নেগোসিয়েশন করতে চাচ্ছেন, তাদের কাছে আপনার অবস্থানটা কোন জায়গায়।
আমাদের গার্মেন্টস বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটা এক্সপোর্ট আইটেম। মানে আমাদের এক্সপোর্ট আর্নিংয়ের, আমাদের ইকোনমির একটা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সবচেয়ে বড় একটি পিলার। ৮০ শতাংশ অফ এক্সপোর্ট প্রডাক্ট বাংলাদেশের ডিপেনডেন্ট অন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। গার্মেন্টস প্রডাক্ট না? আমাদের প্রায় একটা হিসাব আছে যে প্রায় ৪০ লাখ লোক এর ওপর নির্ভরশীল। ৪০ লাখ যদি কাজ করে- তার মানে আমরা ধরতে পারি ৪০ লাখ ফ্যামিলি। তার মানে একটা হিউজ অ্যামাউন্ট অব পিপল, একটা বড় পপুলেশন হুমকির মুখে আছে এই একটি মাত্র সিদ্ধান্তের কারণে।
তিনি বলেন, কেন হুমকির মুখে আছে সে জায়গায় আমরা যাব, কিন্তু তার আগে যদি বর্তমান অবস্থাটা আমরা একটু দেখি যে আমরা গত এক বছরে কী দেখেছি। গত এক বছরে দেখেছি যে অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হামলা করে ভাঙচুর করে নানা প্রক্রিয়ায়, সরকারি হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে গেছে এবং প্রচুর লোক বেকার হয়েছে।
কিছুদিন আগে তো বিশ্বব্যাংকের যে সমীক্ষায় বেড়েছিল, যেখানে বলা হয়েছে নতুন করে ২৭ লাখ লোক দরিদ্র হয়েছে। আর আমাদের নিজস্ব হিসেবে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় যে খবর বের হয়েছে সেখানে মোর দেন ৫০ থেকে ৬০ লাখ লোক কেবলমাত্র যে গার্মেন্টসগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, সেই কারণে তারা বেকার হয়েছে। এখন এই যে ৪০ লাখ লোক এই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ওপর নির্ভরশীল, সেখানে এখন পর্যন্ত যে প্রাইমারি স্টেপ, সেখানে বলা হচ্ছে যে মোর দেন ১০ লাখ পিপল তারা চাকরি হারাবে। তো ১০ লাখ পিপল মানে ১০ লাখ ফ্যামিলি। তাহলে ইকোনমির অবস্থানে কী হবে? এমনিতে আমাদের ইনভেস্টমেন্ট নেই, এমনিতে আমাদের কোনো বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্য নেই, আমাদের ইকোনমি আমরা স্বীকার করি না; কিন্তু একেবারে যে একটা স্থবির অবস্থায় আছে, সেটি তো হচ্ছে বাস্তবতা। কিন্তু এই অবস্থায় এই যে নতুন একটি হ্যামার আমার মাথা লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয়েছে।
আমার মাথা লক্ষ্য করে যে একটা হাতুড়ি নিক্ষেপ করে দেওয়া হয়েছে এবং যে হাতুড়িটি আসছে এবং সেই হাতুড়িটা থেকে আমি আমার মাথাটাকে বাঁচাতে পারব, নাকি সেই হাতুড়িটা এসে আমার মাথাটাকে একদম ভেঙে চুরমার করে দিয়ে আমাকে মেরে ফেলবে আমি কিন্তু নিশ্চিত না। কিন্তু যখন আমার নাকের কাছাকাছি চলে আসছে, আমার কপালের কাছাকাছি চলে আসছে, তখন আমি বলছি সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি বেঁচে যাব। এখন এই অবস্থাটা কেন ভাই!
আমি যদি প্রশ্নটা করি যে একটা রাষ্ট্র, একটা সরকার গত কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকায়, আপনিও অনেকগুলো রিপোর্ট হয়তো পড়ে থাকবেন। আমাদের একজন ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ তিনি তার সবচাইতে বেশি। তার যত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে তিনি ওয়ান অব দ্য লিডিং ব্যবসায়ী বাংলাদেশের গার্মেন্টসে এবং তার মেজরিটি ব্যবসা কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে তার ক্ষতি হবে সবচাইতে বেশি। এবং তিনি কিন্তু এ কথাটা বলছেন যে গত ৪০ বছরে ব্যবসা-বাণিজ্যে আমি যে অবস্থা দেখিনি, আজকে আমরা এমন একটা অবস্থায় পড়েছি। এবং এটা যে কেবল তার অবস্থা তা না, এটা কিন্তু টোটাল বাংলাদেশের ইকোনমি, টোটাল বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা।
এখন আমি তো প্রশ্ন করব যে আমরা এই জায়গাটায় কেন আসলাম? আমাদের কি এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো পথ ছিল? কিংবা আমরা কি প্রপারলি কোনো ব্যবস্থা আমরা নিতে পেরেছি? আচ্ছা এখন পর্যন্ত আপনি হয়তো বলবেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প তো কেবলমাত্র যে বাংলাদেশের ওপর আরোপ করেছে তা তো না ১৫০টা দেশের ওপর আরোপ করেছে ইয়েস এখন 150টা দেশের ওপর যে আরোপ করেছে তারা কী করছে আমরা কি আমরা তো সেগুলো আমাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান তাই না এ পর্যন্ত সাকসেসফুলি যে দুইটা দেশ নেগোসিয়েশন করতে পড়েছে নাম্বার ওয়ান প্রথমেই করেছে যুক্তরাজ্য আচ্ছা যুক্তরাজ্য ফার্স্ট ওয়ার্ড কান্ট্রি আমরা বাদ দিলাম সেকেন্ড যে কান্ট্রিটা নেগোসিয়েশন করেছে সেটা হচ্ছে ভিয়েতনাম এবং ভিয়েতনাম যখন নেগোসিয়েশনটা করে ফেলে সেটা আমার জন্য কিন্তু এলার্মিং মাসুদ ভাই। এই কারণে অ্যালার্মিং যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে গার্মেন্টস মানে যে বাজারটা সে বাজারে ভিয়েতনামের হচ্ছে নাম্বার ওয়ান পজিশন নাম্বার সেকেন্ড চায়না আমরা আছি সেখানে থার্ড পজিশনে এবং ভিয়েতনাম চায়না এবং আমাদের ব্যবধানটা কিন্তু মার্কেট যুক্তরাষ্ট্রের যে মার্কেট শেয়ার অলমোস্ট হাফ। তাদের ধরেন প্রায় ২০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার।
যদি আমি বলি যে নর্থ আমেরিকান মার্কেটে আমাদের শেয়ার আমি ১০ শতাংশ ধরলাম। তাইলে আবার আমাদের পিছনে আছে ইন্ডিয়া। এখন ইন্ডিয়ার সঙ্গে যদি নেগোসিয়েশন হয়, ভিয়েতনামের সঙ্গে হয়ে গেছে। চীনের সঙ্গে যদি হয়ে যায় তাহলে আমি যাব কোথায়? এবং আপনি যে ৩৫ শতাংশ বলছেন বিষয়টি কিন্তু ৩৫ শতাংশ না। আপনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠি দিকে, ল্যাঙ্গুয়েজের দিকে যদি খেয়াল করেন, তিনি বলছেন যে, এক্সিস্টিং যেসব শুল্ক আছে তার অতিরিক্ত হিসাবে বিবেচিত হবে ৩৫ শতাংশ। তারমানে এখন আমার ১৫ শতাংশ আছে। ৩৫ যদি যোগ করি তাহলে আমি ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালক ।
আমি ৫০ শতাংশ যোগ করে আমার চাইতে ডাবল মার্কেট শেয়ার নিয়ে যেভিয়েতনাম প্রতিদ্বন্দীতা করছে তার সঙ্গে আমি টিকবো কি করে তাতে এমনিতে আমার চাইতে ডাবল আবার তার ১৬ শতাংশ সে টেরিফ দেবে। আমি দিব ৫০ বা সবাই বলার চেষ্টা করে৩৫ আমি যদি 35% বলি তাহলে আমি তার
দেখেন যেদিন ঘোষণা করলেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে তিনি টেরিফ আরোপ করবেন দ রাইট ওয়ে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির যিনি প্রধান মানে সেক্রেটারি তিনি হচ্ছে মানে মোস্ট পাওয়ারফুল পলিটিশিয়ান অফ দা কান্ট্রি তার যিনি প্রাইভেট সেক্রেটারি বা সেক্রেটারি জেনারেল তিনি সঙ্গে সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করলেন ফোন করে কথাবার্তা বললেন বলে একটা গ্রাউন্ড তৈরি করে ফেলেন যে আমি তোমার সঙ্গে ডিল করতে চাই নেগোসিয়েশন করতে চাই আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব এবং ভিয়েতনাম গভমেন্ট
প্রথমেই অফিশিয়ালি মন্ত্রীদের নিয়ে সচিব দের নিয়ে তারা একটা নেগোসিয়েশন টিম কিন্তু এনাউন্সমেন্ট করে দিয়েছেন। তারা প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে কথা বলেছেন। থিংক ট্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমেরিকাতে তাদের বন্ধুবান্ধব কারা আছে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা কি করেছি? আমরা কি কোন কারা নেগোসিয়েশন করবে? কোন টিম আমরা কি এনাউন্স করেছি? আমরা আস্তে করে পাঠিয়ে দিলাম কাকে? আমাদের নিরাপত্তা উপদেশটাকে। আচ্ছা, ট্রেড নেগোসিয়েশনের সঙ্গে নিরাপত্তা উপদেশ সম্পর্ক কি? এবং তাকে যে আমরা এসাইন করেছি সেটা তো আমরা অফিশিয়ালি এনাউন্স করি নাই যে এই লোকটি আমেরিকার সঙ্গে নেগোসিয়েশন করবে তার সঙ্গে অমুক অমুক যাবে।
আমরা কিন্তু অফিশিয়ালি সেটাও করিনি তাইলে আমরা যখন অফিশিয়ালি কোন এনাউন্সমেন্ট করলাম না আমেরিকা কেন ভাববে যে হ্যা সে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হয়ে আসছে? আর তার পোর্টফোলিও তো এই কাজের জন্য না। এবং পরে আমরা দেখলাম ওকে ফাইন বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্ত হচ্ছে কমার্স সেক্রেটারি যুক্ত হচ্ছে। তার মানে হচ্ছে কি আমরা প্রথমে এটাকে গুরুত্বই দেই নাই। কিংবা আমরা মনে করেছি ওকে ফাইন আমার অনেকে ঠাট্টা করে বলে যে, এনজিওরা তো আর এক্সপোর্ট করে না। এনজিওদের যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এক্সপোর্ট থাকত, তাদের যদি, গ্রামীণের যদি এক্সপোর্ট থাকত তাইলে হয়ত এটা আরো বেশি গুরুত্ব পেত। যেহেতু কোনো এনজিওর এক্সপোর্ট নাই, ব্যবসায়ীদের এক্সপোর্ট, সেই কারণে হয়ত গভর্মেন্ট এটাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় নাই।
Comments