
সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ৩টি সম্ভাবনা, ৩টি আতঙ্ক এবং একটি ত্রিমুখী সংঘর্ষ ধেয়ে আসছে। যেটি জুন মাসে শুরু হবে, জুলাই-আগস্টে গিয়ে এটি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে।’ সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন তিনি।
গোলাম মাওয়া রনি বলেন, চলতি বছরের জুন মাস নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত মে মাসে সরকারের সঙ্গে বিএনপির, বিএনপির সঙ্গে এনসিপির, তারপর বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের, জামায়াতের সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ আমরা দেখেছি এবং সেখানে বিএনপি যেভাবে তাদের শক্তি-সামর্থ্য প্রদর্শনের চেষ্টা চালিয়েছে, তা পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে অনেকটা স্তমিত হয়ে পড়েছে। ঈদুল আজহার সময়টিকে সরকার ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম টানা ১০ দিনের ওপরে সরকারি ছুটি। অফিস-আদালত বন্ধ, কাজ নাই, কর্ম নাই।
পুরো রাষ্ট্র এখন অর্থনৈতিক সংকটে দিশাহারা এবং আমাদের অর্থনৈতিক সংকটটা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যাদের হাতে টাকা আছে তারা এই সময়টিকে নিজেদের জন্য স্বর্গরাজ্য বানানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। আমরা সেই যে বেগমপাড়ার কথা শুনেছিলাম, যা ফুলে-ফেঁপে আওয়ামী লীগ জমানাতে রীতিমতো বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছিল, সেই বেগমপাড়ার বিস্তৃতি এখন সুন্দরবন ছাড়িয়ে আমাজনের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে বহু মানুষ অঢেল অর্থের মালিক হয়ে লন্ডন, আমেরিকা, দুবাই, সিঙ্গাপুর, কানাডা-প্রায় সব জায়গাতেই টাকা পাচারের অধিক্ষেত্র তৈরি করে নিজেদের এবং তার পরিবারের ভবিষ্যতকে অর্থবিত্ত এবং ক্ষমতায় জৌলুসপূর্ণ করেছেন।
গত ১০ মাসে যেসব কর্মকাণ্ড তারা করেছেন এবং আমরা যেগুলো শুনতে পেরেছি, পত্রপত্রিকায় এসেছে, এগুলো রীতিমতো লোমহর্ষক।
তিনি আরো বলেন, যখন জুন মাস শুরু হলো তখন থেকে মূলত পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি হয়ে গেল। কিন্তু এই ছুটির আগে অনেকগুলো অসমাপ্ত কর্ম রয়ে গেছে। যেমন ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ নিয়ে বিএনপি এবং সরকার একেবারে রীতিমত মুখোমুখি অবস্থানে। কেউ কাউকে এক চুলও ছাড় দিতে নারাজ এবং এটা এই অফিস-আদালত খোলার পর আবার নতুন করে শুরু হবে।
এরপর জুলাই চার্টার-এটা নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে, পুলিশের সঙ্গে, বিএনপির সঙ্গে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একটা ভীষণ রকম কুরুক্ষেত্র তৈরি হবার আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ সরকার যেভাবে একটা জুলাই চার্টার বা বিপ্লবী সরকার গঠন করতে চায় এবং সেটা করতে গিয়ে ড. ইউনূসকে আরো ক্ষমতাধারন, তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দান থেকে শুরু করে আরো যা কিছুই করা হোক না কেন জুলাই চার্টারের অধীনে; তখন সেই বিপ্লবী সরকারের সঙ্গে এখন যেভাবে বিএনপি মোলাকাত করছে বা বিএনপি যেভাবে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে- এটি বিপ্লবী সরকারের সঙ্গে একেবারেই সম্ভব হবে না। এটা মোর দ্যান মার্শাল।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে ৩ টি সম্ভাবনা, ৩ টি আতঙ্ক এবং একটি ত্রিমুখী সংঘর্ষ ধেয়ে আসছে। যেটি জুন মাসে শুরু হবে, জুলাই-আগস্টে গিয়ে এটি একেবারে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে।
তিনি বলেন, শোনা যাচ্ছে সরকার প্রথম থেকে চাচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। দিস ইজ দা ফাস্ট প্রবলেম। বিএনপি সর্বশক্তি দিয়ে চাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে না। তো সরকার যে ব্লুপ্রিন্ট নিয়ে এগুচ্ছে সেখানে তাদের টিকে থাকতে হলে জাতীয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে। এভাবে তারা তাদের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। তারা ওইভাবে তাদের এজেন্ট তৈরি করে ফেলেছে এবং ওইভাবে তারা এগুচ্ছে এবং এখানে কোনো কারণে যদি ড. ইউনূস বা এনসিপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা করতে না পারে তাহলে তাদের একটা নৈতিক পরাজয় হবে এবং বাকি যে সময়টুকু রয়েছে সেটা বিএনপির কথার বাইরে তারা একটু শব্দও করতে পারবে না।
তিনি বলেন, আরেকটি সমস্যা হলো- একটা গণভোট। আগের সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নে তারা একটা গণভোট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যে গণভোটটি হতে পারে ড. ইউনূসের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য। যে গণভোট হতে পারে একটি বিপ্লবী সরকারের জন্য। গণভোট অথবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন- এই তিনটি বিষয় নিয়ে জুন মাসে, জুলাই মাসে, আগস্ট মাসে বাংলাদেশ উত্তাল থাকবে। এখানে এক একটা দিন এক একটা বছরের মতো মনে হবে অফিস খোলার সঙ্গে সঙ্গেই। এখন এই কাজের জন্য কিন্তু প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যেই বিভক্ত হয়ে গেছে। যারা ড. ইউনূসকে সহযোগিতা করবেন তারা তার এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যারা বিএনপির পক্ষে তারা বিএনপির আদর্শ বাস্তবায়ন করার জন্য বা বিএনপির যে চিন্তা চেতনা এটা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এই অবস্থাতে প্রায় সব পক্ষই মুখোমুখী অবস্থানে পৌঁছে গেছে। এই অবস্থান যদি বিদ্রোহে চলে যায়, বিপ্লবে চলে যায় এবং তার সঙ্গে দেশি এবং বিদেশী বিভিন্ন পক্ষ যদি যুক্ত হয় তাহলে যে সর্বনাশ আমাদেরকে গ্রাস করবে। সেই সর্বনাশের কবল থেকে আমরা আগামী ১০ বছরেও বের হতে পারবো না। সেগুলো আল্টিমেটলি শুরু হয়ে গেছে সবদিক থেকে এবং সবাই চোরাগুপ্তা হাসি দিচ্ছে।
Comments