
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ও সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম। দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ডনে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধের বিষয়টি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, সাবেক সরকার প্রধান শেখ হাসিনার কাছ থেকে ক্ষমতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে যাবার পর প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের মতো কাজে সেই আশা এখন আশঙ্কায় পরিণত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা হয়নি ওই লেখায়। সম্পাদকীয়তে বলা হয়, সাবেক সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এবং তার দলের বিরুদ্ধে যত অভিযোগই থাকুক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রধান শর্ত হচ্ছে প্রক্রিয়াটি অন্তর্ভুক্তিমূলক করা।
আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, একটা দেশের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটা দলকে চাইলেই রাজনীতির মাঠ থেকে মুছে ফেলা যায় না। বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগের এখনও বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ায় বাংলাদেশের নড়বড়ে গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এর আগে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা একটি উদ্বেগজনক ঘটনা। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত স্বাভাবিকভাবেই গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা হ্রাস এবং রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে জয়সোয়াল আরও বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার থাকা উচিত। আমরা আশা করি বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
ভারতের উদ্বেগের প্রতি ইঙ্গিত করে ডনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে ভারতের উদ্বেগের পেছনে তাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এত বড় একটা রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে, পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এবং রাজনৈতিক বিভক্তি আরও গভীর হবে। অথচ দেশের এই ক্রান্তিকালে রাজনৈতিক ঐক্যের কোনও বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে অবাধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী নজর রাখবে বলে সতর্ক করে ওই লেখায় বলা হয়, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হলো ক্ষমতার সুষ্ঠু হস্তান্তর নিশ্চিত করা। তবে একটা দলকে সরিয়ে দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আওয়ামী লীগসহ সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি অঙ্গীকারের প্রমাণ দিতে হবে।
Comments