অসাধ্য সাধন করল এআই! ১৮ বছরের অপেক্ষার পর বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়ে সন্তানের বাবা-মা হলেন দম্পতি

সন্তান ধারণের জন্য ১৮ বছর ধরে চেষ্টা করেও ব্যর্থ এক দম্পতির মুখে হাসি ফুটিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। চিকিৎসকরা যখন তাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন যে দু'জনেরই বন্ধ্যাত্ব সমস্যা থাকায় কখনো বাবা-মা হতে পারবেন না, এমনকি আইভিএফ পদ্ধতিও যেখানে কার্যকর হয়নি, সেখানেই আশার আলো দেখিয়েছে এআই। সিএনএন-এর খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রোগের কারণ নির্ণয় থেকে শুরু করে ওষুধ তৈরি— যে কোনও জটিল থেকে জটিলতর কাজই করে ফেলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আধুনিক রোবটিক সার্জারিতেও ভরসা এআই। আর এখন দেখা যাচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি প্রযুক্তি আইভিএফেও বড় ভূমিকা নিতে পারে।
প্রাকৃতিক বা জৈবিক উপায়ে যারা সন্তান লাভ করতে পারছেন না, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান তাদের জন্য বিকল্প বন্দোবস্ত করেছে। পদ্ধতিটাই শুধু আলাদা। আইভিএফ সন্তান আর পাঁচটা স্বাভাবিক শিশুর মতোই হবে। এই পদ্ধতিতে শরীরের বাইরে জীবন সৃষ্টি করা হয় বলে পদ্ধতিটিকে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বলে।
এদের বলা হয় 'টেস্ট টিউব বেবি'। মায়ের শরীর থেকে ডিম্বাণু ও বাবার শুক্রাণুর নিষেক ঘটানো হয় শরীরের বাইর। ভ্রূণ তৈরি করে তা প্রতিস্থাপন করা হয় মায়ের গর্ভে। ওভারিতে সিস্ট, ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লক, এন্ডোমেট্রিয়োসিস বা পলিসিস্টিক ওভারি থাকলে এবং স্বাভাবিক ভাবে মা হতে না পারলে তখন আইভিএফ করা হয়।
এই পদ্ধতিতে সাফল্যের হার যেমন বেশি, তেমনই ব্যর্থও হন অনেকে। ওই দম্পতির ক্ষেত্রেও তা-ই হয়। কারণ চিকিৎসকেরা জানান, পুরুষ সঙ্গীর অ্যাজোস্পার্মিয়া আছে। অ্যাজোস্পার্মিয়া এমন এক সমস্যা যাতে শুক্রাণু উৎপাদনের হার কমে যায়। সাধারণত শুক্রাশয়ে প্রতি দিনই প্রায় ১২ কোটির বেশি শুক্রাণু তৈরি হয়। কিন্তু অ্যাজোস্পার্মিয়া হলে সেই হার কমে যায়। শুক্রাণুর সংখ্যা যেমন কমে, তেমনই তার গুণগত মানও কমে যায়। ফলে সেই শুক্রাণু আর নিষিক্ত করা যায় না। আইভিএফও কাজ করে না। এখানেই নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করে এআই।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এক বিশেষ প্রযুক্তি তৈরি করেছেন যার নাম ‘স্টার’। এই পদ্ধতিতে জানা যায়, শুক্রাশয়ের কোটি কোটি শুক্রাণুর মধ্যে ঠিক কোন কোনটির গুণগত মান ভাল। সেই নির্দিষ্ট শুক্রাণুটিকে চিহ্নিত করাও সম্ভব। এই দম্পতির ক্ষেত্রেও পুরুষ সঙ্গীর শুক্রাণুর নমুনা নিয়ে, তার মধ্যে থেকে তিনটিকে আলাদা করে এআই। ওই তিনটি শুক্রাণুই ছিল শেষ সম্বল, যা ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে পারত। স্বাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ওই বিশেষ তিনটি শুক্রাণুকে খুঁজে বের করা সম্ভব ছিল না। সেই কাজটিই করে দেয় এআই। তাতে আইভিএফও সফল হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ে সন্তানও আসে দম্পতির কোলজুড়ে।
Comments